মহিষাদলের বাড় অমৃতবেড়িয়া গ্রামে বাঁধ পরিদর্শনে বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র keshabmanna23@gmail.com
আবার ঘূর্নিঝড়ের অশনি সংকেত। উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ঘূর্নিঝড় 'মোকা'র! এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমার সমুদ্র তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।
দু'বছর আগে মে মাসেই ইয়াস ঝড় আছড়ে পড়েছিল উপকূলের ওই সব এলাকায়। এর মধ্যে ‘মোকা’র আগমণ। জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শনিবার জেলা জুড়ে ঘূর্নিঝড় মোকাবিলায় মহড়া হয়েছে। কীভাবে মানুষদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে, কোথায় রাখা হবে, ঝড় কেটে যাওয়ার পর উদ্ধার কাজ কীভাবে হবে, সব কিছুর মহড়া হয়েছে। তবে বারবার প্রকৃতির হাতে ‘মার’ খাওয়া ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। আবার কি ঘরছাড়া হতে হবে? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মুখে মুখে। এই অবস্থায় একদিকে যেমন মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হচ্ছে, পাশাপাশি, মানুষকে অভয় দিচ্ছে প্রশাসন।
ঠিক দু' বছর আগে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের রুদ্ররূপ দেখেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দারা। ইয়াসের তাণ্ডবে সেদিন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল দিঘা, কাঁথি, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ একের পর এক সাজানো-গোছানো এলাকা। দু'বছর পেরিয়ে আবার মে মাস। এবার চোখ রাঙাচ্ছে 'মোকা'। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার ঘর্ণাবর্তে পরিণত হবে নিম্নচাপে। বুধবার শক্তি বৃদ্ধি করে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং তা ঘূর্নিঝড় রূপে আছড়ে পড়তে পারে। তবে, ঝড়ের অভিমুখ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে এখনই ভীত কাঁথি- ১ নম্বর ব্লকের সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা। কাঁথি -১ ব্লকের শৌলার বাসিন্দা দেবব্রত গিরি বলেন, "গতবারেই ইয়াসের জলে সব নষ্ট হয়েছিল। বাঁধে ত্রিপল খাটিয়ে ছিলেন অনেকেই। আবার একই ঘটনা হলে ফের বাড়ি ছাড়তে হবে।"
এই শৌলা গ্রামেই রয়েছে মৎস্যবন্দর। আগের দুর্যোগে সেই মত্স্য বন্দরেরও ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক। দু'বছর ধরে একটু একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে গ্রাম। কিন্তু আবার সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে না তো? মৎস্যজীবী ঘনশ্যাম মণ্ডল বলেন, "গতবার জল ঢুকেছিল। আমরা চাই গার্ডওয়াল হোক।না হলে প্রতিবার এক সমস্যা হবে।" একই রকম আতঙ্কে দিন কাটছে রামনগর-১ ব্লকের চাঁদপুর, লছিমপুর, জলধা এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাদের। সেখানে ইয়াসে সমুদ্র বাঁধ কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সেচ দফতর। কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। সম্প্রতি সেখানে গোটা এলাকায় সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি বাকি কাজ আগামী ১০ মের আগে সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি সোমবার বলেন, "সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করা হয়েছে। নিয়মিত পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে সব দফতরের মহড়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সবরকম প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।’’
২০২১ সালে ইয়াসে জলের তলায় ছিল জুনপুট এবং সংলগ্ন হরিপুর মৎস্য খটি। ওই এলাকাতেও সমুদ্র এবং খটির মাঝে কোনও ব্যবধান নেই। সেখানে বাঁধ নির্মাণের কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে কাঁথি মহকুমা সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত বন্দোপাধ্যায় বলেন, "তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ। বাকি অংশগুলিতে পরবর্তী কালে বাঁধ নির্মাণ কাজ করার কথা সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।’’
সোমবার ২৫টি ব্লকের বিডিওদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে। সকলকে আগামী কয়েক দিন সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মহিষাদল ব্লকের উদ্যোগে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দিনই বৈঠক হয়। পরে বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডল ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা রূপনারায়ণ নদের বাঁধ পরিদর্শনে যান। ইয়াসে বাড় অমৃতবেড়িয়া, অমৃতবেড়িয়া, দনিপুর, ভোলসারা গ্রামে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেচ দফতরের আধিকারিক কল্যাণ দাস জানান, বিপজ্জনক জায়গাগুলি ব্রিক ব্লক পিচিং করা হয়েছে। ভয়ের কারণ নেই। আধিকারিকেরা এদিন দনিপুর– মায়াচর ঘাটে গিয়ে মৎস্যজীবী এবং মাঝিদের সতর্কও করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy