চন্দনপুর গ্রামের সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ কয়েকদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাঁকে অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর দুয়েক আগে এলাকার এক তরুণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেবারেও চিকিৎসক না থাকায় অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তাতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণের।
বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসকের দেখা নেই রামনগর-১ ব্লকের একেবারে প্রান্তিক এলাকা চন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা কালে সমস্যায় নাজেহাল হতে হচ্ছে চন্দনপুর, মুকুন্দপুর, জুকি, বিদ্যাধরপুর-সহ বাধিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু গ্রামের মানুষকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৫ সালে চন্দনপুর গ্রামে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। তার জন্য স্থানীয়রা সাড়ে ৬ একর জমি দিয়েছিলেন শুধু বহির্বিভাগে রোগীরা পরিষেবা পেতেন। প্রসূতি কিংবা মুমূর্ষু রোগীও চিকিৎসা পরিসেবা পেতেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অজিত পাঁজা ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে খুশি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে পুরনো ভবনের পাশেই গড়ে ওঠে ঝাঁ চকচকে নীল সাদা নতুন ভবন। ২০০৯ সালে নবনির্মিত ওই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী। কিন্তু ভবনটুকুই সার। সেখান থেকে কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বাদে নিয়মিত বহির্বিভাগ চলে। একজন মাত্র চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি সপ্তাহে দুদিন রোগী দেখেন। বাকি দিনগুলিতে একজন ফার্মাসিস্ট, দুজন নার্স এবং একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দায়িত্ব সামলান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনেও তাঁরা থাকেন না। দুপুরের পর বাড়ি ফিরে যান। ফলে তারপর কেউ অসুস্থ হলে কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখম হলে তাঁর চিকিৎসার পাওয়ার উপায় থাকে না। সে ক্ষেত্রে রোগী নিয়ে ছুটতে হয় দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কিংবা বালিসাই বড়রাংকুয়া হাসপাতালে। যার দূরত্ব কমবেশি ১৫ কিলোমিটার। এলাকার বাসিন্দা অরূপ রতন রানা বলেন, ‘‘ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করার ঘোষণা হয়েছিল। তাই সকলেই স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন আশা করেছিলেন। তবে সর্বক্ষণের কোনও চিকিৎসক না থাকায় অন্তর্বিভাগ যেমন পুরোপুরি বন্ধ, তেমনি বহির্বিভাগেও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন চিকিৎসা মেলে না বললেই চলে।’’ বাসিন্দাদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে এখানে যাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়া যায় সে দিকে নজর দিক স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসন।
এদিকে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারদিক খোলা। ফলে হাসপাতাল চত্বর অনেকেই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ। বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি তপন মাইতি বলেন, ‘‘রাজ্যে শাসক দলের উন্নয়ন মানে শুধু নীল-সাদা রং। তৃণমূলের আমলে চিকিৎসকেরা গ্রামীণ এলাকায় চাকরি করতে চাইছেন না। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’’ যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেন রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায়।
বিধায়ক অখিল গিরির দাবি, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ করে পরিষেবা স্বাভাবিক করতে স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy