চার্চ ও মেলা চত্বরে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করল মেদিনীপুর পুরসভা। নিজস্ব চিত্র
অতিমারিতে বেশ কয়েকটা বছর অতিবাহিত হয়েছে। তখন একাধিক হাসপাতালে অনেকগুলি করোনা-শয্যা ছিল। এখন সে সব শয্যার বেশিরভাগই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। ধুলো জমেছে। পড়ে রয়েছে সে সময়ে কেনা যন্ত্রপাতিও। পড়ে থেকে থেকে কিছু যন্ত্র অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম— দুই জেলারই। চিনে ফের ভয়ঙ্কর হচ্ছে করোনা। পরিস্থিতি দেখে এই দুই জেলায়তেও ফের করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি সারা হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সব মিলিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৬৩ হাজার জন। মৃত্যু হয় ৫৪০ জনের। চলতি বছরেও আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৮,৬২০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। এক সময়ে এই জেলায় ৫৫৯টি করোনা-শয্যার বন্দোবস্ত ছিল। শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এখানে শয্যা ছিল ২০০টি। মেদিনীপুর মেডিক্যালে করোনা-শয্যা ছিল ১১৬টি। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ৫৩টি, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ৮০টি। ডেবরা করোনা হাসপাতাল চালু করা হয়েছিল। সেখানে শয্যা ছিল ১১০টি। ওই ৫৫৯টি করোনা-শয্যার মধ্যে সাধারণ শয্যা ছিল ১০০টি। অক্সিজেন সুবিধাযুক্ত শয্যা ছিল ৩৩০টি। এইচডিইউ শয্যা ছিল ৮৬টি, সিসিইউ শয্যা (ভেন্টিলেটর ছাড়া) ৩০টি, সিসিইউ শয্যা (ভেন্টিলেটর যুক্ত) ১৩টি। সিসিইউ শয্যাগুলি মেদিনীপুর মেডিক্যালেই ছিল।
সংক্রমণ কমতে পরে পরে করোনা হাসপাতালগুলি বন্ধ হয়েছে। এখন মেডিক্যালেই একমাত্র কিছু শয্যা চালু রয়েছে। জেলার আর কোথাও শয্যা চালু নেই। ঝাড়গ্রামেও চলতি বছরের শুরুতেই করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় নাইট শেল্টার করোনা হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের চারতলা নাইট শেল্টার ভবনে করোনা হাসপাতাল চালু করা হয়েছিল। সেখানে ৮৫টি শয্যা ছিল। তারমধ্যে ১৫টি শয্যা ভেন্টিলেটর ছিল, ডায়ালিসিস ছিল।
মৃদু উপসর্গের রোগীদের জন্য শহরের পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকার ওয়ার্কিং উইমেন হস্টেল ভবনে ৭৫ শয্যার করোনা দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়েছিল। তাও বন্ধ হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরনো ভবনে ৪০টি শয্যা চালু করা হয়েছিল।
নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ২০টি করে শয্যা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার উপসর্গ কমে যাওয়ায় সেখানে এখন সাধারণ রোগীদের রাখা হয়। তবে নয়াগ্রামে ১০০টি শয্যার করোনা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।
করোনা মোকাবিলায় সে সময়ে অনেক মেশিনপত্রও কেনা হয়েছিল। পাঠানো হয়েছিল হাসপাতালগুলিতে। যেমন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, বাইপাপ মেশিন, অক্সিমিটার ইত্যাদি। শালবনি হাসপাতালেই রয়েছে ২টি ট্রান্সপোর্ট ভেন্টিলেটর, ৩০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ১৫টি স্ট্যান্ডার্ড ভেন্টিলেটর, ৪টি বাইপাপ মেশিন, ১১টি ফিঙ্গার অক্সিমিটার। অনেক মেশিনপত্রই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হয়ে পড়ে রয়েছে।
জেলাতেও কিছু মেশিনপত্র জমা হয়েছিল। যেমন ট্রান্সপোর্ট ভেন্টিলেটর ৬টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১২৫টি, স্ট্যান্ডার্ড ভেন্টিলেটর ২৯টি, বাইপাপ মেশিন ৩৯টি। এ সব জেলা স্বাস্থ্য দফতরের স্টোররুমে পাঠানো হচ্ছে।
ঝাড়গ্রামের নাইট শেল্টারে রোগীদের জন্য এক্সরে, ইউএসজি, ডায়ালিসিস, ভেন্টিলেটরের মতো সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ বসানো হয়েছিল। রোগী না থাকায় চলতি বছরে ডায়ালিসিসের মেশিন হাসপাতালের সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু ভেন্টিলেটর স্থানান্তর করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউতে। কিছু মেশিনপত্র মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি জিনিসপত্র ধুলোয় ঢাকা পড়ে রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় এখন করোনা আক্রান্ত নেই। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফের আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো জেলায় রয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীরও বক্তব্য, ‘‘শয্যাগুলি ফের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই সব মেশিনপত্র নিয়মিতই দেখভাল করা হয়।’’
আর ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলছেন, ‘‘নয়াগ্রামে একশো শয্যার করোনা হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়াও আগে যে দু’টি করোনা হাসপাতাল ছিল, সেগুলিও প্রস্তুত রয়েছে। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy