ঘটনাস্থল: তখনও দেহ উদ্ধার হয়নি। জমেছে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হল এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার নারায়ণগড়ের কুনারপুরে এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বললে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। যথাযথ তদন্তের দাবিতে দেহ আটকে চলে বিক্ষোভ। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, খড়্গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। চাপের মুখে নামাতে হয় পুলিশ কুকুর।
মৃত ব্যবসায়ীর নাম সুদর্শন দে (৩৬), ওরফে গৌতম। তাঁর বাড়ি কুনারপুরের পারুলদায়। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে খবর, সুদর্শনের কোনও শত্রু ছিল না। আলু, পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা নিয়েই থাকতেন তিনি। প্রায় দশ বছর তিনি এই ব্যবসা করছিলেন। তাঁর ছ’বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শ্বাসরোধ করে ওই ব্যবসায়ীকে খুনের পরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশই স্বতঃপ্রণোদিত খুনের মামলা রুজু করে তদম্তে নেমেছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘এটি খুনের ঘটনা। তবে দেহে কোনও আঘাত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পরে বাকিটা জানা যাবে। তদন্ত চলছে। দ্রুত দোষীদের ধরা হবে।’’ প্রথমে কেন আত্মহত্যা বলা হল ? অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘কোনও ভাবে আমাদের কাছে ভুল খবর এসেছিল।’’
স্থানীয়দের দাবি, ছিনতাইয়ের পরে দুষ্কৃতীদের চিনে ফেলাতেই খুন করা হয়েছে সুদর্শনকে। নিহতের দাদা মদনমোহন দে বলেন, ‘‘ব্যবসার সূত্রে ভাইয়ের কোনও শত্রুতা ছিল কিনা জানি না। তবে দু’লক্ষের বেশি টাকা নিয়ে ভোর চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ভাই। ছিনতাইয়ের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। পরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।’’
এ দিন নারায়ণগড়ে হাট ছিল। বুধবার ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা আদায় করে এ দিন ভোর চারটে নাগাদ মোটর বাইকে নারায়ণগড়ে আসছিলেন সুদর্শন। মহাজনকে টাকা মিটিয়ে ব্যবসার সামগ্রী কেনার কথা ছিল। পরে বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কুনারপুরের চৌরঙ্গী ও বাবলা খালের পাশে একটি পলাশ গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। গলায় গামছার ফাঁস লাগানো ছিল, মুখও ছিল বাঁধা। তক্ষুণি পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেহটি গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায়।
পুলিশ প্রথমে খুনের না মানায় পরিস্থিতি জটিল হয়। সকাল দশটা নাগাদ নারায়ণগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই ব্যবসায়ীর মোটরবাইকটি রাস্তার ধারে পড়েছিল। টাকার ব্যাগ, হেলমেট, টর্চ, ব্যবসার খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। ঘটনাস্থলের পাশে একটি ছুরিও পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য চন্দন দাস বলেন, ‘‘পুলিশে জানালে আত্মহত্যা বলেই জানানো হয়। ঘটনাস্থলে না এসেই পুলিশ কী করে জানল আত্মহত্যা? তা নিয়েই ক্ষোভ ছড়ায় মানুষের মধ্যে।’’
বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে ক্ষোভ সামলে সুদর্শনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy