তারাপদ টুডু। ফাইল চিত্র
পাছে নেশা হয়, তাই যিনি খেজুর রস খেতে ভয় পেতেন, তিনি কী ভাবে অস্ত্র পাচার করবেন!
লালগড় থানার মালখানা থেকে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ধৃত সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) তারাপদ টুডু সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করছেন প্রাক্তন সহকর্মীদের অনেকেই। তাঁদেরই একজন বললেন, ‘‘ডেবরা থানায় একসঙ্গে কাজ করার সময় দেখেছি, কোনও বদঅভ্যাস ছিল না তারাপদের। শীতের মরসুমে খেজুর রস খেতেন অনেকে। কিন্তু তারাপদ সেটাও খেতেন না। তাঁর ধারণা ছিল, খেজুর রস খেলে নেশা হয়।’’
কোনও নেশা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় স্তরে নেই কোনও অভিযোগও। এক কথায় ‘গোবেচারা’ হিসেবে পরিচিত তারাপদে অস্ত্র পাচারের সঙ্গে যুক্ত তা মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীরা। এ ছাড়াও উঠছে অন্য একটি প্রশ্ন। থানায় রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি! এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা হওয়ায় লালগড় থানায় পুলিশের কড়া নজরদারিও থাকে সব সময়। তার মধ্যেও কী ভাবে থানার মালখানা থেকে অস্ত্র পাচার করলেন তারাপদ?
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত একনলা ও দোনলা বন্দুক সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে মালখানায় রাখা হয়েছিল। লালগড় থানার সেই মালখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ছিলেন তারাপদ। মালখানার কাজে তারাপদের সহকারী ছিলেন এনভিএফ কর্মী লক্ষ্মীরাম রানা। তদন্তকারীদের যেটা ভাবাচ্ছে, সেটা হল, থানার এত নজরদারির মধ্যে থেকে কীভাবে তারাপদ ১৮টি বন্দুক কীভাবে বাইরে পাচার করে দিলেন। বুধবার ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলার পরে তারাপদ, লক্ষ্মীরাম সহ ধৃত চারজনকে হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, বাকি দুই অভিযুক্ত বিনপুরের মুরকুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ সুধাংশু সেনাপতি ও তার ছেলে দিলীপ সেনাপতি বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের পরিচিতজনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক থানায় রাখার সূত্রে তারাপদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কিন্তু সেই আলাপের জেরে তারাপদ এত বড় ঝুঁকি নিলেন কোন প্রলোভনে? আর বছর তিনেক পরে অবসর নেওয়ার কথা তারাপদের। চাকরি জীবনের শেষ পর্বে তারাপদ কেন অস্ত্র পাচার করতে গেলেন। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, তারাপদ বিভিন্ন সময়ে ওই বন্দুকগুলি মালিকদের ফেরত দেওয়ার দাবি করলেও মালখানার রেজিস্টারে সে ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই। অথচ নিয়ম হল, মালখানায় হেফাজত থেকে কোনও লাইসেন্সধারী মালিককে বন্দুক ফেরত দেওয়ার সময়ে তাঁর সই, তারিখ, সময় ও উপযুক্ত তথ্যের উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু মালখানার রেজিস্টারে সে সব কিছুই ছিল না। থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, ১৮টি বন্দুক থানা থেকে একসঙ্গে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার এক-একটি বন্দুক নিয়ে গেলেও সেটা কেন অন্য কারও চোখে পড়ল না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তারাপদ ছুটিতে গেলে মালখানার দায়িত্ব সামলাতেন এনভিএফ কর্মী লক্ষ্মীরাম রানা। তারাপদ লালগড় থানার মালখানা ইনচার্জ থাকাকালীন কতবার বাড়ি গিয়েছিলেন, সঙ্গে তাঁর কেমন ব্যাগ থাকতো সেটা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। বাম আমলে মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বেও কখনও পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে থানার আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নষ্ট অথবা সরকারি সম্পত্তি নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠেনি। তাই কোন পরিস্থিতিতে তারাপদ এমন করলেন, তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশের একাংশ। তবে পুলিশের একাংশের ধারণা, কেবল তারাপদ বা লক্ষ্মীরামের একার পক্ষে এত বড় দুসাহসিক কাজ করা সম্ভব নয়। এই অস্ত্র পাচারে কোনও ‘বড় মাথা’ রয়েছে কি-না সেটা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy