নতুন ঘরে জমিয়ে আড্ডা। বিধাননগরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বিকেলে মাঠে ঘুরতে বেরিয়েও শান্তি নেই। দুপুর থেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত রথীনবাবু। তাঁর শুধু একটাই চিন্তা, বিকেল হলে তবে সকলের সঙ্গে দেখা হবে। গল্পও হবে। ঘড়ির কাঁটা চারটে ছুঁতেই গন্তব্য বিধাননগরের মাঠ। মাঠে পৌঁছতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। তাড়াহুড়োতে বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে বেরোতে ভুলে গিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি শুরু হতেই রথীনবাবু বিপাকে পড়লেন। মাঠে একটাও শেড নেই, যে একটু দাঁড়ানো যাবে।
শুধু রথীনবাবু নন, মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরের মাঠের পাশে বসার জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়েন বয়স্করা। সমস্যা মেটাতে মাঠের একদিকে স্থায়ী বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌ রায়। মাঠে বসার জায়গা তৈরি নিয়ে প্রথমে বিতর্ক তৈরি হয়। তারপরেই কাউন্সিলর দলমত নির্বিশেষ সকলের মতামত জানতে বৈঠক ডাকেন। সেখানে সকলেই এই ঘর তৈরির পক্ষেই মত দেন।
কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘ওয়ার্ডবাসীর মত নিয়ে বয়স্কদের জন্য একটু বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিলে অর্থের অপচয় হয় না। এরফলে ওয়ার্ডের দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বয়স্ক মানুষই বসতে পারবেন। ওখানে কোনও রাজনীতি হবে না। নিয়ম মেনেই পুরসভার ওয়ার্ড উন্নয়ন তহবিল থেকেই ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজটি করেছি।’’
বসার ঘর তৈরির জন্য কেউ দিয়েছেন ২০টি চেয়ার, কেউ দিয়েছেন পাখা, কেউ দিয়েছেন টেবিল, টেলিভিশন, কেউ কিনে এনেছেন দাবা, কেউ দিয়েছেন বই। বন দফতরের আধিকারিক শীতল ঘোষ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী বিদ্যুৎ ঘোষ, আইনজীবী রঞ্জিত চোংদার, অবসরপ্রাপ্ত কৃষি সেচ দফতরের আধিকারিক অমল চক্রবর্তী থেকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, শিক্ষক সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এখানে আড্ডা দিতে আসেন।
যে যার সময় মতো হাজির হয়ে যান আড্ডায়। কেউ বই পড়েন তো কারও চোখ থাকে সংবাদপত্রে, কেউ আবার দাবায় কিস্তিমাত করা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আড্ডার মাঝে একটু মাঠে ঘুরেও নেওয়া যায়। শীতল ঘোষ, রমেশ দাসদের কথায়, ‘‘বাড়িতে সারাক্ষণ তো বসে থাকা যায় না। আবার একা একা ঘুরবই বা কোথায়? এক সঙ্গে সকলে থাকলে মনে হয় আপনজনের সঙ্গে রয়েছি। সুখ, দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়। স্ত্রী বিয়োগের মতো দুঃখের স্মৃতিও ভুলে থাকা যায়। মনে হয় আমরাই একটা পরিবার।’’
ব্যাঙ্ক আধিকারিক অশোক পতির কথায়, “বয়স্কদের সামনেই স্কুলে পড়া ছেলেরাও সিগারেট ধরিয়ে টানছে। মুখের ভাষাও এত খারাপ যে, শুনলে নিজেদেরই লজ্জা লাগে। তাই আমাদের মতো বয়স্কদের জন্য একটু আলাদা জায়গার প্রয়োজন রয়েছে।” তাই সকলে মিলে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে বসার জায়গা তৈরির আবেদন জানান।
কৃষি সেচ দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের সাহায্য ছাড়া আমরা এই স্থায়ী আড্ডার জায়গা পেতাম না। এই বয়সে হঠাৎ বৃষ্টি হলে দৌড়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়তাম। এ বার তা থেকে বাঁচলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy