ঝোপঝাড়: ওঝাপাড়ার পাশে নিকাশি নালা, সাফাই হয় না। রাস্তার পাশে ঝোপ। নিজস্ব চিত্র
পূর্ব মেদিনীপুরের জ্বর আক্রান্ত এলাকায় এ বার নতুন সংযোজন কোলাঘাট। বুধবার ব্লকের বরদাবাড় গ্রামের এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছে জেলা হাসপাতালে। শনিবার থেকে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মৃতের নাম শীলা ওঝা (২৮)।
মঙ্গলবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েত এলাকার আটাং গ্রামের প্রৌঢ়া দুলু জানারও (৫৮)। এর আগে ওই গ্রামে আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল। কোনও ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য দফতর মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেঙ্গি দেখায়নি। যদিও পরিবারের দাবি, তাঁদের ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। গত সপ্তাহে পাঁশকুড়়া শহরের সুরানানকার এলাকার এক শিক্ষিকারও মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে। পটাশপুর-২ ব্লকে খাড়, ভগবানপুরের ইক্ষুপত্রিকা গ্রামেও জ্বরের
প্রকোপ চলছে।
সেই তালিকায় এ বার সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বরদাবাড়। গত এক মাস ধরে গ্রামের ওঝাপাড়ায় অন্তত ১৫ জন জ্বরে আক্রান্ত বলে খবর। তাঁদের মধ্যে মাত্র চার জন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে বাড়িতেই, গ্রামীণ চিকিৎসকের ভরসায়। অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রতিনিধি দল এলাকা পরিদর্শনে আসেননি বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের।
হাওড়া-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে গ্রামের ভিতরে চলে গিয়েছে মোরাম রাস্তা। আধ কিলোমিটার এগোলেই চোখে পড়বে পাশাপাশি প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘর। প্রতি ঘরে কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। শীলা ওঝার মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালে ওঝাপাড়ায় খোঁজ করে পৌঁছনো গেল বুলু ওঝার বাড়ি। খড়-টালির ছাউনি দেওয়া একচিলতে ঘরে বস। ঘরের পিছনেই পানা পুকুর, তার পাশে আবার বাঁশঝাড়। সর্বত্রই অস্বাস্থ্যের ছাপ স্পষ্ট। বুলুবাবুর স্ত্রী শীলা শনিবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। বুলু বলেন, ‘‘জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব ছিল। বরদাবাড় বাজারে এক চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে জ্বর কমেছিল। কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শীলাকে। বুধবারই তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও তাঁর রক্ত পরীক্ষার সুযোগই মেলেনি বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শীলাদেবীর জা বছর তেইশের অসীমা ওঝা ও তাঁর এক বছরের মেয়ে সুমনাও জ্বরে ভুগছে ক’দিন ধরে। প্রতিবেশী মিনু ওঝার ছেলে ১৭ বছরের অরূপ ও ১৩ বছরের মেয়ে অর্পিতাও জ্বরে আক্রান্ত। দু’জনেই জানায় স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে জ্বর কমেছে। কিন্তু শরীর দুর্বল। মিনুদেবী বলেন, ‘‘ওদের রক্ত পরীক্ষায় জানা গিয়েছে ভাইরাল জ্বর। কিন্তু শীলার মৃত্যুর পর খুবই চিন্তায় আছি।’’
স্থানীয় চন্দনা ওঝা, শুকদেব ওঝারা বলেন, ‘‘নিকাশির সমস্যা এলাকায়। বর্ষার জল প্রায় কোমর সমান হয়ে জমে আছে মাঠে। পুকুরের জলও পচা, দুর্গন্ধ ছড়ায়।’’ তাঁদের ক্ষোভ, আগাছা সাফাই হয় না। দিনেরবেলাও বাড়ির ভিতর মশা কামড়ায়। নিস্পৃহ পঞ্চায়েত। এমনকী স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শিবিরও করা হয়নি বলে অভিযোগ।
যদিও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিমলেন্দু মাইতি দাবি করেন, ‘‘ওই গ্রামে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টিম গিয়ে শিবির করেছে।’’ তারপর তিনি বলেন, ‘‘বুধবার এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়েছি। তবে কী কারণে মৃত্যু জানি না। জেলা হাসপাতালে খোঁজ নিন।’’
স্থানীয় সাগরবাড় পঞ্চায়েতের প্রধান সুরজিৎ মাইতির দাবি, ‘‘ওঝা পাড়ায় জ্বর হচ্ছে— স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছিলাম সময় মতো।’’ জল নিকাশি সমস্যা ও সাফাই সমস্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। আশ্বাসও দেন দ্রুত কাজ করার। কিন্তু
বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গা-ছাড়া মনোভাবে অসন্তুষ্ট বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ডেঙ্গি যদি না-ও হয়, কী এমন জ্বর হচ্ছে যে এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। যেখানে ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কৃত হচ্ছে, সেখানে সামান্য জ্বরে ভুগে কেন মরছে মানুষ?
উত্তর নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy