চন্দ্রকোনা রোডের আঁধারনয়নে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখানোর তোড়জোড়। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ ধান কাটার কাজ বন্ধ রাখবেন। কেউ দিনমজুরির কাজে যাবেন না। কাল, রবিবার আক্ষরিক অর্থেই ‘ছুটিবার’ জেলার শ্রমিকদের।
এ দিন যে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল! ভারত খেলবে ফাইনাল, বিপক্ষে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের দেশকে জেতাতে রোজগারকে একদিনের জন্য ছুটিতে রেখে খেলা দেখবেন তাঁরা। তাঁদের মতো গ্রামের অনেকেই হাতের কাজ ফেলে বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখবেন। গ্রামে বড় টিভি বা বড় পর্দায় খেলা দেখানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
চন্দ্রকোনা রোডের আঁধারনয়ন এলাকার বাসিন্দা নঈম মণ্ডল ফ্রিজ-এসি মিস্ত্রি। এটাই তাঁর রোজগারের একমাত্র পথ। ক্রীড়াপ্রেমী নঈম বিশ্বকাপে ভারতের সব খেলাই দেখেছেন। ফাইনালে উঠেছে দেশ। ফাইনাল দেখতে রবিবার নিজের কাজ বন্ধ রাখবেন তিনি। নঈমদের সঙ্গে এলাকার আরও অনেক যুবক উদ্যোগ করেছেন আঁধারনয়ন স্কুলবাজারে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর। সে জন্য ভারতীয় দলের সদস্যদের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স দিয়ে প্যান্ডেল করা হচ্ছে। থাকছে তেরঙ্গা পতাকাও। নঈম বলছেন, ‘‘কাজ বন্ধ রেখেই ফাইনাল দেখব। বড় পর্দায় খেলা দেখানোর উদ্যোগ করেছি।’’ চন্দ্রকোনা রোডের নয়াবসতের বাসিন্দা অশ্বিনী পাতর একশো দিনের কাজের শ্রমিক ছিলেন। জবকার্ডে কাজ করেও বকেয়া মজুরি মেলেনি। সংসার চালাতে দিনমজুরের কাজ করেন। যেমন, এখন ধান কাটার কাজ করছেন। মোবাইলের ও-প্রান্ত থেকে অশ্বিনী বললেন, ‘‘জানি একদিন কাজে না গেলে ২৭০ টাকা মজুরি পাব না, অভাব তো রয়েছেই। তাই বলে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ভারত, সেটা দেখব না বললে হয়!’’
গোয়ালতোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর উদ্যোগ করছে কয়েকটি ক্লাব। সে জন্য প্রজেক্টার মেশিন ভাড়া করা হচ্ছে। একটি ক্লাবের সদস্য সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘বড় পর্দায় খেলা দেখানোর জন্য চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।’’ গোয়ালতোড় ও গড়বেতা এলাকায় অনেক জায়গাতেই বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহম্মদ শামিদের ছবি টাঙানো হচ্ছে। লম্বা তেরঙ্গা পতাকা তৈরি করা হচ্ছে কিছু এলাকায়। পাথরপাড়ার বাসিন্দা সুদেব মাহাতো, কৃষ্ণ মাহাতোরা চন্দ্রকোনা রোডের একটি মোটর গ্যারাজে কাজ করেন। রবিবারও ছুটি নেই। বিশ্বকাপের দৌলতে এ বার তাঁদের রবিবার ছুটি। সুদেবরা বলেন, ‘‘মালিককে বলে দিয়েছি রবিবার কাজে আসব না। মালিক বেতন কেটে নেবে বলেছে। সে কাটুক, কিন্তু ফাইনাল মিস করা চলবে না।’’
গড়বেতার সন্ধিপুর, খড়কুশমা, আগরা অঞ্চলে বড় এলইডি টিভিতে ফাইনাল দেখানোর উদ্যোগ করছেন স্থানীয় যুবকেরা। খড়কুশমার সাদেক চৌধুরি বলেন, ‘‘ভারত যেন বিশ্বকাপ জেতে, না হলে কাজ ফেলে খেলা দেখাটাই বৃথা হয়ে যাবে।’’ গড়বেতার অনেকে সমাজমাধ্যমে ফাইনালের জন্য বড় পর্দা ভাড়া নেওয়া ও দেওয়ার কথা লিখে পোস্ট করছেন। শুধু খেলা দেখা বা দেখানোর তোড়জোড়ই নয়, গড়বেতার তিনটি ব্লকের অনেক দোকানেই জাতীয় পতাকা, বিরাট-রোহিতদের ছবি, এমনকি তাঁদের নাম লেখা নীল জার্সিও বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে গাঁ-গঞ্জও। দেশের জন্য গলা ফাটাতে তৈরি হচ্ছেন বকেয়া মজুরি না পেয়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে পড়া
জবকার্ডের শ্রমিকেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy