Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

উন্নয়নের জন্যই প্রয়োজন ভাগের

ফের ভাঙছে মেদিনীপুর। পূর্ব-পশ্চিমের পরে এ বার আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় নতুন জেলা ঝাড়গ্রাম। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আইন-আদালত, জেলা ভাঙলে পরিষেবা সহজে মেলার কথা। বিশিষ্টজনেরা কী চোখে দেখছেন এই জেলা ভাগকে, নতুন জেলার কাছে তাঁদের চাহিদাই বা কী— তাঁদের কথা তাঁদেরই কলমে।

অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

সালটা ২০০৫। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক পদে দায়িত্বভার নিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! চারপাশে সবুজ শালের বন।

দারিদ্র আর অনাহার-ক্লিষ্ট এলাকায় প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধ রূপের বৈচিত্র্য বড্ড বেমানান লেগেছিল। সবে (২০০৪) আমলাশোলে অনাহার আর অপুষ্টিতে ৫ আদিবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় তোড়পাড় প্রশাসনিক মহল। অনুন্নত এলাকা উন্নয়নের জন্য পিছিয়ে পড়া গ্রামের তালিকা তৈরি চলছে। ওই সময় ঝাড়গ্রাম মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যোগাযোগের রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবার বেশ অভাব ছিল।

মহকুমা সদর ঝাড়গ্রাম থেকে বিনপুর-১ ব্লকের সদর লালগড়ে সরাসরি যাওয়ার জন্য কংসাবতীর উপর স্থায়ী সেতু ছিল না। সুবর্ণরেখায় সেতুর প্রয়োজন ছিল। বর্ষায় লালগড়ে ও নয়াগ্রামে মরসুমি সাঁকো ডুবে গেলে নৌকোয় পারাপার করতে হত। শীর্ষ-কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, লালগড় এবং নয়াগ্রামে সেতু প্রয়োজন।

বর্তমান রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জঙ্গলমহল দুর্গমতার অভিশাপ মুক্ত হয়েছে। আমকলা সেতু তৈরির ফলে ঝাড়গ্রাম-লালগড়ের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখায় জঙ্গলকন্যা সেতুটি হওয়ায় বাইরের সঙ্গে নয়াগ্রামের দূরত্ব অনেকটাই ঘুচেছে। ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে রাস্তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সেচ অগ্রগতি হয়েছে।

ঝাড়গ্রাম মহকুমার জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ তফসিলি উপজাতিভুক্ত। লোধা-শবর, সাঁওতাল, মুণ্ডা জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলির জীবনযাত্রা স্বতন্ত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষিপ্রধান সমতল এলাকার থেকে জঙ্গলমহল অনেকটাই আলাদা। সাধারণ গতে-বাঁধা উন্নয়ন নীতি এখানে ফলপ্রসূ হয় না। এখন আরও সুসংহত ভাবে উন্নয়ন-কাজ হচ্ছে। নিবিড় উন্নয়নের জন্য ঝাড়গ্রাম এলাকাকে নিয়ে পৃথক জেলার প্রয়োজন ছিল।

ঝাড়গ্রামকে পৃথক জেলা করার সিদ্ধান্তটি সদর্থক পদক্ষেপ। ফলে ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ হবে। ঝাড়গ্রামের মানুষজন সহজ-সরল মায়াময়। ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের ফলে এলাকার লোকশিল্প, সংস্কৃতি, পর্যটনশিল্পেরও দ্রুত বিকাশ ঘটবে। এক সময় অনেক অশান্তি-আতঙ্কের মাসুল দিয়েছেন এলাকাবাসী। এবার ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’-এর মন্ত্রে এগিয়ে যাবেন নতুন জেলার প্রত্যেক বাসিন্দা। এ আমার অন্তরের প্রত্যাশা!

লেখক ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মহকুমাশাসক। বর্তমানে বিশেষ সচিব, রাজ্য বিদ্যুৎ ও অচিরাচরিত শক্তি উৎস দফতর।

অন্য বিষয়গুলি:

Development
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy