কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ১৯৮৪ সালে তৈরি হয়েছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রথম দফায় তিনটি, পরে দ্বিতীয় দফায় আরও তিনটি ইউনিট বসানো হয়। প্রতি ইউনিট ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ দিনে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ১২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাত্র একটি ইউনিট সচল রয়েছে। বন্ধ রয়েছে পাঁচটি ইউনিটের উৎপাদন। রবিবার, ৫ জানুয়ারি কেটিপিপি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেহাল আর্থিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের সুর শোনা গেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের কণ্ঠে। কিন্তু কেন এমন অবস্থা? তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘যে কারণে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি সেই বিদ্যুতেরই চাহিদা না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে খবর, গত কয়েক বছর ধরেই ৬টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র দু’টি ইউনিট চালু রয়েছে। গত অগস্ট মাস থেকে তিন তিনবার এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শূন্যতে নেমে যায়। বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র একটি ইউনিট। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির দাবি, বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে নতুন করে বড় কোনও শিল্প আসেনি। একের পর এক বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে কল-কারখানা। ফলে কমেছে বিদ্যুতের চাহিদা। তাই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বন্ধ রেখেছেন পাঁচটি ইউনিট। একটি মাত্র ইউনিট চালু থাকায় আর্থিক জোর কমেছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের।
কেটিপিপি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে ৬ ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট চালাচ্ছি। আর্থিক দিক দিয়ে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন। তা সত্ত্বেও কিন্তু আমরা এই মেলা চালিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’’
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে খবর, জেনারেল ম্যানেজারের উদ্বেগ যে নেহাত মিথ্যা নয় তার প্রমাণ বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় তাপবিদ্যুৎ কেদ্র আর্থিকভাবে ধুঁকছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। শুধু কি বিদ্যুতের কম চাহিদাই এর জন্য দায়ী? সূত্রের খবর কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটগুলিও মান্ধাতা আমলের। সম্প্রতি তিনটি ইউনিট সংস্কার করা হলেও হালফিলের নতুন আধুনিক ইউনিটের সঙ্গে সেগুলি টেক্কা দিতে পারে না বলে দাবি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির। এই সংগঠনের দাবি, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৪ টাকা ৭০ পয়সা। সেখানে অন্য জায়গায় নতুন আধুনিক ইউনিটগুলি এর চেয়ে অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
সংগঠনের মুখপাত্র নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। তাই এখানকার বিদ্যুতের চাহিদা কম।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি তাই অন্য রাজ্য থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ কিনছে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বাঁচাতে গেলে সরকারের উচিত পুরনো ইউনিটগুলি বদলে নতুন ইউনিট বসানো। পাশাপাশি রাজ্যে নতুন শিল্প আসারও খুবই দরকার। সরকারের অবিলম্বে এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’’
পরিসংখ্যান বলছে এই মুহূর্তে গোটা দেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মোট ৮১ টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি ইউনিট এই কোলাঘাটেরই। পরিস্থিতি বদল হয়ে ফের চালু হোক কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবকটি ইউনিট, এমনটাই চাইছেন সকলে।
কিন্তু আদৌ কি ফিরবে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাল? উত্তর দেবে সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy