নিয়ম ছিল। কিন্তু এতদিন নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই দিব্বি চলছিল। এ বার খোদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশু পাচার চক্রের সন্ধান মিলতেই ঘুম ভাঙল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের। শিশু পাচার বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগী হল জেলা স্বাস্থ্য ভবন।
সরকারি হাসপাতালে আয়াদের ঢোকা নিষিদ্ধ করা হল। আর এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে সমস্ত স্তরের কর্মীদের পোশাক ব্যবহার, পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামূলক করল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বৃহস্পতিবার জেলার মহকুমা এবং অনান্য হাসপাতালের সুপারদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকেই সরকারি হাসপাতালে সমস্ত নিয়মকানুন যাতে মেনে চলা হয়, তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ না মানলে এ বার নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াও হবে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ক’দিন ধরে বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে একের পর এক শিশু পাচারের তথ্য প্রকাশ্যে আসছিল। গত মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে শিশু পাচারের সময় হাতেনাতে এক আয়াকে পাকড়াও করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ওই ঘটনা চাউর হতেই উদ্বেগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শিশু পাচার রুখতে এ বার কড়া নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্রের খবর, এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে আয়াদের কাজ বহুদিন আগেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এখনও জেলার ঘাটাল এবং খড়্গপুর দু’টি মহকুমা হাসপাতালেই আয়াদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। শুধু মহকুমা স্তরের হাসপাতালেই নয়, জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামীণ হাসপাতালেও আয়ারা দিব্বি ঘুরে বেড়ায়। সূত্রের খবর, আয়ারা মূলত মহিলা বিভাগেই থাকেন। গল্প করতে করতেই রোগীর এবং পরিজনদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে অনেক সময় শিশু বদল এবং পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ।
কিন্তু এ বার জেলার সমস্ত হাসপাতাল থেকে আয়াদের বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য ভবন। পাশাপাশি নিয়ম থাকলেও সরকারি হাসপাতাল গুলিতে বহু চিকিৎসক এবং কর্মীরা ইউনিফর্ম ব্যবহার না করে সাধারণ পোশাকে কাজ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এতদিন এ বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখায়নি।শুধু পোশাকই নয় জেলার সিংহভাগ হাসপাতালেই কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে সমস্ত স্তরের কর্মীরা তাঁদের পরিচয়পত্রও কাছে রাখেননি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এ বার থেকে পোশাক এবং পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বুধবারই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের পোশাক নেই, তাঁদের পোশাক তৈরি করতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মীদের পরিচয় পত্র তৈরি করতেও সুপারদের বলা হয়েছে।”
হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে নিরাপত্তা কর্মীও বাড়ানো হবে। রোগীর সঙ্গে দেখা করার জন্য এমনিতেই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও হাসপাতালের ভিতরে সাধারন মানুষের যাতায়াত বেড়ে গিয়েছে।মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “এবার থেকে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে যে কেউ ঢুকলেই তাঁকে কারন দর্শাতে হবে।সুপারের অনুমতি নিয়েই ঢুকতে হবে।রোগীর পরিজনদের হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা অনুমতি পত্র সব সময়ই রাখতে হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এখন সবসময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডেই ব্যাপক ভিড়।আর এখন চিকিৎসক এবং কর্মীদের একাংশ সরকারি পোশাকও ব্যবহার করেন না।নেই পরিচয় পত্রও।এর ফলেই বাড়ছে দুষ্টচক্রের সংখ্যা।তাই এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এই সমস্ত নিয়মকানুন শুরু হলে হাসপাতালে দুষ্কর্ম কমবে।”
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে আয়া ঢোকা নিষিদ্ধ করেছি। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীর পরিজনের দায়িত্বে আয়া থাকতে হবে। অবশ্য এই সুযোগের অপব্যবহার হলে কী হবে তা ভেবে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy