শমিত দাস
‘বিকল্প’ প্রার্থী বাছা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রার্থীর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল কি? বৃহস্পতিবার বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাসের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর উঠছে এই প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার ছিল খড়্গপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন পরীক্ষার দিন। এ দিন ওই পরীক্ষায় বাতিল হয়ে গিয়েছে শমিতের মনোনয়ন। বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তিনি প্রতীকপত্র (ফর্ম-বি) নিয়ে মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসার বৈভব চৌধুরীর কাছে গেলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তা জমা করতে পারেননি। কেন এত দেরি? শমিত বলেন, “মনোনয়ন জমার শেষদিনেই প্রতীকপত্র জমার শেষ দিন বলে আমাদের আগে জানানো হয়নি। এবার নাকি নতুন নিয়ম হয়েছে বলে মনোনয়ন জমার পরে জানতে পারি। তার পরেও আমরা প্রতীকপত্র এনে জমার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সময় পেরিয়ে গিয়েছে বলে জমা নেওয়া হয়নি।” রিটার্নিং অফিসারের ব্যাখ্যা, ‘‘সর্বদল বৈঠক ডেকে আমরা সবকিছু বলে দিয়েছিলাম। সঙ্গে মনোনয়নের যে ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। সেই ফর্মের নীচের অংশে বিস্তারিত লেখা ছিল। সকলে তো সেই নিয়মেই প্রতীকপত্র জমা দিয়েছে!’’
প্রতীকপত্র না থাকলেও নির্দল প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারতেন শমিত। কিন্তু নিয়ম হল, নির্দল প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১০ জন প্রস্তাবক থাকতে হয়। কিন্তু শমিত দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় মাত্র একজন প্রস্তাবক ছিলেন। তাই নির্দল প্রার্থী হিসাবেও তার মনোনয়ন গ্রহণযোগ্য হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোনয়নের শেষ দিন পর্যন্ত শমিত-সহ ৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে শুধুমাত্র শমিতেরই মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খাসতালুকে উপনির্বাচন। তাই এই আসন দিলীপ তথা গেরুয়া শিবিরের কাছে মর্যাদার লড়াই। তারউপর বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জেলা সভাপতি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অথচ শেষবেলায় দেখা গেল, সেই বিকল্প প্রার্থীরই মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেল। স্বভাবতই গেরুয়া শিবিরের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপি শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, মনোনয়নের শেষদিনে দলের ঘোষিত প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝার সঙ্গে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে শমিতের মনোনয়ন জমা ছিল দলের কৌশল। কারণ, প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জমি সংক্রান্ত জামিন অযোগ্য মামলা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে বিজেপির অন্দরে। হাইকোর্ট থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার না করার অন্তর্বর্তী জামিন নিয়ে শহরে ফিরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দলের একাংশের মধ্যে প্রার্থী প্রেমচাঁদকে ঘিরে ক্ষোভ থাকায় বিড়ম্বনা রয়েছে দলের অন্দরেই। এমন পরিস্থিতিতে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ‘বিকল্প’ প্রার্থী হিসাবে শমিতকে মনোনয়ন জমা করান বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্ব। জেলা সভাপতি নিজেও জানিয়েছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ‘বিকল্প’ প্রার্থী হিসাবে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, ১১ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, এই কৌশলের আগে কি পর্যাপ্ত হোমওয়ার্ক ছিল না? উত্তর এড়িয়ে নিয়ম বদলের অভিযোগ তুলছেন শমিত। আর বলছেন, ‘‘প্রেমচাঁদই প্রার্থী। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে মনোনয়ণ জমা দিয়েছিলাম। সেটি বাতিল হয়ে গেলে কী আর করা যাবে!”
এ দিন পরীক্ষার শেষে ৮টি মনোনয়ন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও শিবসেনার প্রার্থীর প্রতীক-সহ মনোনয়ন রয়েছে। আর চারটি মনোনয়ন নির্দল প্রার্থী হিসাবে গৃহীত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় অধিকার পার্টি নামে একটি মনোনয়ন জমা পড়লেও এই রাজ্যে ওই দলের অনুমোদন না থাকায় তারাও প্রতীকপত্র জমা করতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy