শহিদ বেদির সামনে দ্বারকানাথ পণ্ডা (বাঁদিকে)। তৈরি তৃণমূলের তোরণ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রাত পোহালেই নেতাই শহিদ দিবস।
নেতাই গ্রাম থেকে কিলোমিটার দু’য়েক আগে লালগড়ের হাটচালায় তৈরি হয়েছে তৃণমূলের তোরণ। বুধবার ছিল হাটবার। ভিড়ে ঠাসা হাটের রাস্তার বাঁ দিকে তৃণমূলের শহিদ স্মরণসভার মঞ্চও প্রস্তুত। হাটচালা থেকে নেতাই যাওয়ার হতশ্রী পিচ রাস্তার দু’ধার ছেয়ে দেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের ছবি দেওয়া তৃণমূলের পতাকায়।
নেতাই গ্রামে ঢোকার পরেই বদলে গেল সেই ছবি। সেখানে কোথাও তৃণমূলের পতাকা চোখে পড়ল না। গ্রামের এদিক-সেদিকে বিজেপির কয়েকটি পতাকা রয়েছে। শহিদ বেদির কাছে উড়ছে বিজেপির বড় একটি পতাকা। সদ্য ধোয়া-মোছা শহিদ বেদির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির বর্ষীয়ান সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা। তিনি জানালেন, বৃহস্পতিবার সকাল ন’টায় কমিটির উদ্যোগে শহিদ বেদিতে মালা দেওয়া হবে। এ বার শহিদ বেদি প্রাঙ্গণে কোনও স্মরণসভা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে তিনি জুড়লেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শহিদ বেদিতে মালা দিতে আসবেন বলে শুনেছি। আমাদের অবস্থান একেবারেই নিরপেক্ষ। পার্থবাবু এলে দেখা করে নেতাই জুনিয়র হাইস্কুলকে হাইস্কুলে উন্নীত করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাব। সেই সঙ্গে স্কুলটি এ বার যাতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অনুমোদন পায়, সে ব্যাপারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’’ আর শুভেন্দু অধিকারী? দ্বারকানাথের জবাব, ‘‘শুভেন্দুবাবু কখন আসবেন আমাদের জানা নেই।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছিল। নিহত হয়েছিলেন চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী। তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পিছনে এই ঘটনাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সেই গ্রামে শহিদ দিবসের আগের দিন তৃণমূলের পতাকা দেখতে না পাওয়ার তাৎপর্য আলাদা বলে মানছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তবে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘এ দিন বিকেলে নেতাই গ্রামেও দলীয় পতাকা লাগানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, হাটচালায় তৃণমূলের স্মরণসভায় শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার বিকেলে তৃণমূল কর্মীরা নেতাই গ্রামে গিয়ে দলীয় পতাকা লাগিয়েছেন। তবে শহিদ বেদিতে কোনও দলেরই পতাকা না দেওয়ার জন্য তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলের কাছেই অনুরোধ করেছে স্মৃতি রক্ষা কমিটি।
এ দিন গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, যে যাঁর কাজে ব্যস্ত। অসম্ভব রকমের নীরবতা গ্রামজুড়ে। তৃণমূলের কর্মসূচি নিয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না কেউই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা মনে করিয়ে দিলেন, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাইয়ের ঘটনার পরেই এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। একদিন পরে ৯ জানুয়ারি এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একবারও নেতাইয়ে আসেননি মমতা। এই নিয়ে ক্ষোভ-অভিমান রয়েছে তাঁদের। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায় নেতাইবাসীর এখন ‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি’ অবস্থা।’’
নেতাই কাণ্ডে গুলিতে জখম হংসধ্বজ রায় ও সংকীর্তন রায়ের ছোট ভাই অশোক রায় বলছেন, ‘‘গুলিতে জখম দুই দাদা এখন ভারী কাজ করতে পারেন না। শুভেন্দুদা হংসধ্বজের ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের সুখে-দুখে আছেন। গত দশ বছরে আর কেউ তো আসেননি। খোঁজও নেননি।’’
তবে ভিন্ন সুরও আছে। নেতাই কাণ্ডে নিহত সৌরভ ঘোড়ইয়ের স্ত্রী শম্পা ঘোড়ই, নিহত শ্যামানন্দ ঘোড়ইয়ের ছেলে শান্তনু ঘোড়ই অবশ্য বলছেন, ‘‘দিদির জন্যেই শহিদ পরিবারের সকলে চাকরি পেয়েছি।’’ শুভেন্দু-তৃণমূলের দ্বৈরথ প্রসঙ্গে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ‘‘আমরা শান্তিতেই থাকতে চাই। স্মৃতিরক্ষা কমিটির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কর্মসূচিতে আমরা থাকব।’’
নেতাই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের ট্যাপ বসানোর কাজও চলেছে। গ্রামের কয়েকজন যুবক জানালেন, শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও প্রশাসনের উদ্যোগে বকেয়া কাজ জোর কদমে হচ্ছে।
নেতাই এখন কোন দিকে, মন পড়তে চাইছে শাসকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy