Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

লকডাউনে স্বাস্থ্যরক্ষায় ন্যাপকিন ব্যাঙ্ক 

দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ঋতুকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয় না অনেক সময়ে।

আরিফ ইকবাল খান
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০০:৫৫
Share: Save:

দাবিটা উঠছিল কিছুদিন ধরেই। অসুবিধার সমাধান চেয়ে সংবাদপত্রে চিঠিও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে সমাধান হয়নি স্কুল পড়ুয়াদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের সমস্যার। সমস্যা ছিলই। করোনাভাইরাসের কালে তা আরও বেড়েছে। স্কুল বন্ধ। লকডাউনের মধ্যে বাইরে বেরনোর একটা সমস্যা। আবার প্রত্যন্ত এলাকায় কাছেপিঠে দোকান পাওয়াও মুশকিল। তাই দাবি উঠেছে, স্কুলে মিড ডে মিলের চাল-আলুর সঙ্গে ন্যাপকিনও দেওয়া হোক।

দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ঋতুকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয় না অনেক সময়ে। বিশেষ করে জঙ্গলমহল এবং জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে। সেখানে দোকান তো দূরের কথা বিশুদ্ধ জল মেলাও দুষ্কর। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক মেয়ে শালপাতা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। অসুবিধা দূর করতে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় তিন জেলার কিছু স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। ‘সম্পূর্ণা’ প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৭০টি স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। শালবনির ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী জানাচ্ছেন, চালুর পর থেকে বেশ কয়েকবার ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন খারাপ হয়েছে। শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়ার কথায়, নিয়মিত ন্যাপকিন সরবরাহ করা হয় না। ভাদুতলা হাইস্কুলে দু’টি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। একটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ঝাড়গ্রামে ৩৬টি স্কুুলে ভেন্ডিং মেশিন ছিল।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বেশ কিছু স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন দেওয়া হয়েছিল। হলদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলেও দেওয়া হয়েছিল এই যন্ত্র। এই মহকুমায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থা সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে এগিয়ে আসেন সাহায্যের জন্য। হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের তরফে মহকুমার ১২টি স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন দেওয়া হয়েছিল। এগুলোয় এক সঙ্গে কুড়িটি ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। দশ টাকার কয়েন দিয়ে ভেন্ডিং মেশিন থেকে ন্যাপকিন পাওয়া যেত। মেশিনের সঙ্গেই রযেছে ব্বহৃত ন্যাপকিন নষ্ট করার ব্যবস্থা। বাজিতপুর সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান সুমনা পাহাড়ি জানান, বেশ কার্যকর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর মাঝে অবশ্য স্কুলও বন্ধ। হলদিয়ার জয়নগর হাইস্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল সামন্ত জানান, তাঁদের স্কুলের ভেন্ডিং মেশিনটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। স্কুল সংলগ্ন এলাকার আর্থ-সামাজিক কাঠামো ভাল নয়। দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন স্কুলের শিক্ষকেরা।

সমস্যার বিষয়ে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড। সংস্থার ম্যানেজার (সিএসআর) সত্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরাও খবর পেয়েছি বেশ কয়েকটি স্কুলে এই মেশিনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে সংস্থা এই যন্ত্র সরবরাহ করেছিল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’ তবে সংস্থার তরফে বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা হয়েছে। পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুর, হলদিয়ার শালুকখালি, হোড়খালি, জয়নগরের মতো পিছিয়ে পড়া এলাকায় সংস্থার তরফে ‘ন্যাপকিন ব্যাংক’ করা হয়েছে। স্থানীয় স্তরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। এঁরা স্থানীয় তরুণীদের সঙ্গে বয়:সন্ধিকালীন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এই প্রকল্পের সঙ্গে ৬০০ মহিলাকে যুক্ত করা হয়েছে। রঞ্জিতা কুশলা, নবনীতা দাস, অষ্টমী মিস্ত্রিরা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় ঋতুকালীন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। ন্যাপকিন ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ টাকায় চারটি ন্যাপকিন দেওয়া হয়। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছেই রাখা হয় ন্যাপকিন। পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুরের স্বাস্থ্যকর্মী রঞ্জিতা কুইলা বললেন, ‘‘স্কুলের মেয়েরা স্কুল থেকে ন্যাপকিন না পেলেও আমাদের কাছ থেকে এই সুবিধা পায়। পুরনো অভ্যাস পাল্টানোর সচেতনতা বাড়ছে। ন্যাপকিন ব্যাঙ্ক বা ডিপো থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন নেওয়া এখন আর কঠিন কিছু নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Sanitary Napkin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy