—প্রতীকী চিত্র।
একুশের সভামঞ্চ থেকে আগামী তিন মাসের দলে ব্যাপক রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘যে কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান নিজে ভোটে জিতবেন আর লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে তা হবে না, দল আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তা সে যত বড় নেতার ছত্রছায়ায় থাকুন না কেন।’’
এর পরেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। কারণ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের জেলায় দুটি লোকসভাতেই এ বার হেরেছে তৃণমূল। জেলার ১৬টি বিধানসভার মধ্যে ১৫টিতেই (পটাশপুর বাদে) বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ফলে, আসন্ন রদবদলে কারা পদ হারাবেন, কারাই বা নতুন দায়িত্ব পেতে পারেন, তা নিয়ে চলছে চর্চা।
কাঁথি এবং তমলুক দু’টি লোকসভা আসন হাতছাড়া হওয়ার পরে দলের পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। সেখানে অবশ্য তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁথির পরাজিত প্রার্থী উত্তম বারিকের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘‘বাঘের মতো লড়াই করেছে উত্তম।’’ যদিও তমলুকে পরাজিত দেবাংশু ভট্টাচার্যকে নিয়ে নেত্রীর বিরক্তি চাপা থাকেনি। এ বার একুশের মঞ্চ থেকে অভিষেকের হুঁশিয়ারির পরে অনেকেই পদ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। কাঁথি শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রবীণ হরিসাধন দাস অধিকারী অবশ্য বলছেন, ‘‘সঠিক কথাই বলেছেন অভিষেক। দল যেখানে হেরেছে, সেখানে প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।’’
কাঁথিতে পরাজয়ের পরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে দলেই। প্রথমে রামনগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছিলেন পরাজিত প্রার্থী উত্তম নিজে। সম্প্রতি আবার নাম না করে উত্তমের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন মন্ত্রী এবং তাঁর ছেলে তথা যুব তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। জানা যাচ্ছে, অখিল থেকে শুরু করে কাঁথির একগুচ্ছ দলীয় ও পঞ্চায়েত, পুরসভার পদাধিকারীদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। পরিবর্তে উত্তম বা এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতি মন্ত্রী হতে পারেন বলেও জল্পনা। অখিল শিবিরের কয়েকজন ব্লক সভাপতি এবং জেলা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তও কোপে পড়তে পারেন বলে গুঞ্জন।
অখিল বা সুপ্রকাশ কেউই ফোন ধরেননি। তবে মন্ত্রী শিবিরের কাঁথি জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তরুণ জানা বলছেন, ‘‘তিন মাসের মধ্যে নিশ্চিত ভাল কিছু ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী। অভিষেক আমাদের সেনাপতি। উনি তো বলেছেন নিজের মতো করে পর্যবেক্ষণ করছেন। নিশ্চিতভাবে ওঁর কাছে যে সব তথ্য গিয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখছেন।’’ তৃণমূলের কাঁথি জেলা সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডারও বক্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটে কে কী করেছেন, তা এলাকার মানুষ জানেন। শীর্ষ নেতারা সকলের কাছ থেকে রিপোর্ট নিচ্ছেন। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।’’
কাঁথির পাশাপাশি নন্দীগ্রাম, মহিষাদল, হলদিয়াতেও রদবদলের সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। তমলুক সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূল সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে। এখানে তারা প্রায় ১৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি রাজেশ হাজরার দাবি, ‘‘যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরেও যদি দল শাস্তি দেয়, মাথা পেতে নেব।’’ ময়নার ব্লক সভাপতি সন্দীপব্রত দাসও বলছেন, ‘‘সাংগঠনিক প্রয়োজনে দল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা মনে করলে করতেই পারে।’’
তমলুক শহরের পাশাপাশি নিজের ওয়ার্ডেও পিছিয়ে চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। অভিষেকের নির্দেশের পরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’’ কাঁথি শহরেও অধিকাংশ ওয়ার্ডে, এমনকী পুরপ্রধান সুপ্রকাশের ওয়ার্ডেও পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবে দলের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘পুরসভা বা পঞ্চায়েতে পদাধিকারীদের সরানো এখন সম্ভব নয়। সরকারি নিয়মে আড়াই বছর পর্যন্ত পুরপ্রধান বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যায় না।’’ তবে দলের তরফে হুইপ জারি করে এ ক্ষেত্রে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতারা।
তবে এ সবকেই নাটক বলে কটাক্ষ বিঁধছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের মতে, ‘‘২৬-এ বিধানসভা ভোটের আগে নিজেরা কতটা স্বচ্ছ, তা দেখানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। আর রদবদল করে নতুনদের উপার্জনের রাস্তা তৈরি করাই লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy