অভিযোগ দু’ধরনের। এক, খাতায় নাম আছে। কিন্তু সেই নামে কোনও কর্মী নেই। সেই অস্তিত্বহীন কর্মীর বেতন বাবদ নিয়মিত টাকাও তোলা হচ্ছে। দুই, কর্মী কাজেই আসেন না। অথচ, তিনি মাসের বেতন নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন।
এমনই অভিযোগে শোরগোল পড়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগ ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। জানা যাচ্ছে, ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই ঠিকাদার সংস্থাকে চিঠি দিয়ে একাধিক বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে জবাব না দিলে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত রাউত মানছেন, ‘‘কিছু অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওই সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান। তিনি কিছু ক্ষেত্রে গরমিলের অভিযোগ শোনেন। জানতে পারেন, বেশ কিছু ঠিকাকর্মী কাজেই আসেন না। অথচ, তাঁরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন। সুপারের সঙ্গে কথাও বলেছেন পুরপ্রধান। এরপরই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এমন অনিয়ম হাসপাতালে চলতে পারে না। সুপারকে বলেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।’’ সূত্রের খবর, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার নির্দেশে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পুরপ্রধান। ‘হাসপাতালে যান, নজরদারি রাখুন’- সম্প্রতি মেদিনীপুরে এসে এক বৈঠকে পুরপ্রধানকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন মানস। অনুমান, হাসপাতালে অনিয়মের অভিযোগ পৌঁছেছে মন্ত্রীর কাছেও।
হাসপাতালে এমনিতে স্থায়ী কর্মী কম। ঠিকাকর্মীদের অনেকেও নিয়মিত কাজে আসেন না বলে অভিযোগ। ফলে, সঙ্কট বেড়েছে। বাম আমলেই ওই ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। পরে চুক্তির পুনর্নবীকরণ হয়ে আসছে। হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা-সহ নানা কাজ করার কথা ঠিকাকর্মীদের। পুরপ্রধানের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী রোজ ২০৯জন কর্মীর কাজ করার কথা হাসপাতালে। প্রত্যেকের বেতন মাসে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু ৭০-৮০ জন কর্মী কাজেই আসেন না। অথচ, বেতন পাচ্ছেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, হাসপাতালের এক ফেসিলিটি ম্যানেজার তাঁর মেয়েকে এই কাজে নিযুক্ত করেছেন। হয়তো সুপারিশ করেই। মেয়েটিও কাজে আসে না।’’ পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, হাসপাতালে দৈনিক ১০০ টাকার বিনিময়ে কাজ করছেন প্রায় একশোজন। পুরসভার ৫০ জন কর্মীও হাসপাতালের কাজে নিযুক্ত। এ সব মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা যা দাঁড়ায়, তাতে হাসপাতালে কর্মীর অভাব হওয়ার কথা নয়। হচ্ছে, কারণ একাংশ কর্মী কাজেই আসছেন না। এমনকি, স্থায়ী কর্মীদের কয়েকজনও নিজে কাজে আসেন না বলে অভিযোগ। তাঁর কাজ করার জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে দেন!
ঠিকাকর্মীরা মাসে পান প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে। ৭০ জন কর্মীর বেতন ‘নয়ছয়’ হয়ে থাকলে, মাসে ‘নয়ছয়’ হতে পারে ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। বছরে সেটা ৭১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমিও সুপারকে বলেছি, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে ওই কর্মীদের মাস মাইনের (স্যালারি শিট) তালিকা চেয়ে পাঠান। তালিকা ধরে যাচাই করুন।’’ ঠিকাদার সংস্থার তরফে চন্দন সেনগুপ্ত অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy