লক্ষ্য, আলুর বন্ড নিয়ে কালোবাজারি ঠেকানো। এ বার বাড়তি সতর্ক প্রশাসন। ১ মার্চ থেকে হিমঘরগুলি খুলবে। সরকারি নির্দেশ রয়েছে, ২০ মার্চ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য হিমঘরের মোট মজুত জায়গার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতেই হবে। গতবার এই পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্লকে শিবির করে হিমঘরে আলু রাখতে ইচ্ছুক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা হবে। ব্লক স্তরে সে সব আবেদন খতিয়ে দেখা হবে। ওই ৩০ শতাংশে কাদের আলু থাকবে, সেই ‘সুপারিশ’ ব্লক
প্রশাসনই করবে।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি। পাশাপাশি ছিলেন ‘ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেলে’র (ডিআরডিসি) প্রজেক্ট ডিরেক্টর গোবিন্দ হালদার, উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মৃদুল ভক্তা প্রমুখ। ছিলেন হিমঘরের মালিকেরাও। সরকারি নির্দেশ সম্বন্ধে হিমঘর মালিকদের অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘হিমঘরে আলু রাখার প্রশাসনিক ‘কোটা’র সুযোগ পাবেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। ব্লকস্তরে শিবির হবে। ইচ্ছুক চাষিদের থেকে আবেদন নেওয়া হবে। আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হবে। এর পর ব্লকস্তর থেকে সুপারিশ করে বিভিন্ন হিমঘরে চাষিদের নাম পাঠানো হবে। যাঁদের নাম পাঠানো হবে, তাঁরা ওই প্রশাসনিক ‘কোটা’য় হিমঘরে আলু রাখতে পারবেন।’’ উৎপাদিত আলু যাতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের হিমঘরজাত করতে বেগ পেতে না হয়, সে জন্যই এই বন্দোবস্ত।
মাথাপিছু ৭০ বস্তা অর্থাৎ, ৩৫ কুইন্টাল আলু হিমঘরে মজুত রাখতে পারবেন চাষিরা। গত বছর এই সীমা ছিল মাথা পিছু ৫০ বস্তা অর্থাৎ, ২৫ কুইন্টাল। ইতিমধ্যে জমি থেকে আলু উঠতে শুরু করেছে। ১ মার্চ থেকে আলু হিমঘরজাত হতে শুরু করবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে হিমঘরের সংখ্যা ৮৯টি। এই সংখ্যক হিমঘরে মজুত রাখা যায় প্রায় ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। এই জেলায় বছরে চাহিদা প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। বাকিটা যায় ভিন্ জেলায়, ভিন্ রাজ্যে। মাস কয়েক আগেও আলু নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজ্যের ঘোষণা ছিল, রাজ্যবাসীর চাহিদা না মিটিয়ে আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো যাবে না।
কালোবাজারির আশঙ্কায় বন্ডের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা হয়েছে। নির্দেশ হয়েছে, একজন চাষি সর্বাধিক ৩৫ কুইন্টাল আলু মজুত রাখতে পারবেন হিমঘরে। এ বার আলুর তেমন দাম নেই। অনেক জায়গায় মাঠেই পড়ে রয়েছে আলু। মাঠ থেকে ৫০০- ৫৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে আলু বিকোচ্ছে। মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে হিমঘর মালিকদের স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কোনওভাবেই ১ মার্চের আগে হিমঘরে আলু ঢোকানো যাবে না। ২০ মার্চের পর আর ওই প্রশাসনিক ‘কোটা’ থাকবে না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)