মেদিনীপুর আদালতে সাজাপ্রাপ্তরা। — নিজস্ব চিত্র।
কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা শোনাল মেদিনীপুর আদালত। মেদিনীপুরের ফাস্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক কুসুমিকা দে মিত্র মঙ্গলবার ওই সাজা শুনিয়েছেন। অভিযুক্ত ছিল তিনজনের মধ্যে দুই যুবকের ফাঁসির সাজা হয়েছে। আর এক মহিলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
তিনজনের মধ্যে বিকাশ মুর্মু এবং ছোটু মুন্ডার ফাঁসির সাজা হয়েছে। তপতী পাত্রের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে। মামলার সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মাইতি বলেন, ‘‘ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। তিনজন ধরা পড়েছিল। তারা ওই ছাত্রীর বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল। তিনজনের মধ্যে দু’জনের ফাঁসির সাজা হয়েছে। একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই মামলায় ২৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এফএসএল থেকেও প্রয়োজনীয় রিপোর্ট এসেছিল।
ঘটনা ২০২১ সালের ৩ মে-র। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী জেলারই এক কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ঘটনার দিন দুপুরে তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না পরিজনেরা। পরে পুরনো বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুরনো বাড়ির একটি অংশ ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। সেখানেই কাজ করছিল বিকাশরা। সে দিন সাদাপ্রাপ্ত তিনজনই কাজ করছিল। ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই মহিলা দিনমজুর এবং দু’জন রাজমিস্ত্রিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ দিন মামলার রায় শোনার জন্য আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন নিহত ছাত্রীর মা। পরে আদালত চত্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তিনজন দুপুরে সে দিন একসঙ্গেই ভাত খেয়েছিলাম। ওর বাবা, আমি আর ও। ভাত খেয়ে মেয়ে বলল, ‘মা, আমি বাসনটা ধুয়ে আসছি’। বাসন মেজে আর ফিরে আসেনি। সে দিন অনলাইনে ক্লাসও করেনি।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম, ওরা তিনজন ছাড়া কেউ এ কাজ করেনি। দু’জন ছেলে মিলে ধর্ষণ করেছে। মেয়েটা পুরো সহযোগিতা করেছে। ধর্ষণ করে খুন করেছে।’’
দেহ উদ্ধারের পর পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ এসে ওই তিনজনকে ধরেছিল। সোমবারই অভিযুক্ত তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হল। এ দিন মামলার রায় শোনার পরে ওই কলেজ ছাত্রীর মায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রায়ে খুশি হয়েছি। কিন্তু এ তো আর আনন্দ সংবাদ নয়। আমার কোলটাই তো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা থাকলে এত দিনে ওর এমএসসি কমপ্লিট হয়ে যেত। কত স্বপ্ন ছিল। নিষ্পাপ মেয়েটাকে এ ভাবে শেষ করে দিল ওরা।’’ সাজায় খুশি? এ বার তাঁর জবাব, ‘‘আমার মেয়েকে যে ভাবে কষ্ট দিয়ে ওরা মেরেছে, ফাঁসির থেকেও আরও যদি কঠিনতম কোনও শাস্তি হত, সেটায় আমি আরও খুশি হতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy