Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

রক্তদানে সেঞ্চুরি অসীমের

রক্ত দেওয়া তাঁর নেশার মতো। একবার, দু’বার নয়- রক্তদানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মেদিনীপুরের বরিশাল কলোনির বাসিন্দা অসীম ধর। বছর ষাটের কোঠায়। তবু রক্তদানে উৎসাহ কমেনি এতটুকু। সম্প্রতি ১০০ তম রক্তদান করে ফেলেছেন। রেকর্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে চান অসীমবাবু। যিনি রেকর্ড ঘেঁটে এই তথ্য জানালেন, সেই জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় আবার রক্তদানে ১৩১ তম স্থান অধিকার করে বসে আছেন! রক্তদানেও এত আগ্রহ!

অসীম ধর। নিজস্ব চিত্র।

অসীম ধর। নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

রক্ত দেওয়া তাঁর নেশার মতো। একবার, দু’বার নয়- রক্তদানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মেদিনীপুরের বরিশাল কলোনির বাসিন্দা অসীম ধর।

বছর ষাটের কোঠায়। তবু রক্তদানে উৎসাহ কমেনি এতটুকু। সম্প্রতি ১০০ তম রক্তদান করে ফেলেছেন। রেকর্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে চান অসীমবাবু।

যিনি রেকর্ড ঘেঁটে এই তথ্য জানালেন, সেই জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় আবার রক্তদানে ১৩১ তম স্থান অধিকার করে বসে আছেন! রক্তদানেও এত আগ্রহ! কেন? নিমেষে উত্তরটা আসে, “নির্দিষ্ট সময়ের পর রক্ত দিলে তো ক্ষতি নেই। উল্টে মানুষের উপকার হয়। তাহলে দেব না কেন?”

অসীমবাবুর রক্তদানে উৎসাহের পিছনে একটা গল্পও রয়েছে। সময়টা ১৯৬৯ সাল। জয়ন্তবাবুর তখন ৯ বছর বয়স। তাঁর মা রক্তাল্পতায় ভুগতেন। ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত না মেলায় মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। বড় হয়ে বুঝতে শেখার পর থেকেই তিনি রক্ত দিতে দু’পায়ে খাড়া। জয়ন্তবাবুর অবশ্য রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজিটিভ। তবে অসীমবাবুর গ্রুপ ‘বি’ নেগেটিভ। অসীমবাবু বলছেন, “নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় সাধারণত শিবিরে দিই না। সরাসরি কারও প্রয়োজন হলে দিই। হঠাৎ কার কখন প্রয়োজন হয়। তাই কিছুটা পিছিয়ে।” তিনি আরও বলছেন, “জয়ন্তকে তো হারাতে পারব না। আশা করি আরও কয়েক বছর রক্ত দিতে পারব। আর ২০-২২ বার রক্ত দেওয়া যাবে বলেই মনে হয়।”

স্বেচ্ছায় রক্তদানের শুরু ১৯৮০ সাল থেকে। অসীমবাবুরা তখন ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামে একটি নাটকের দল তৈরি করেছেন। দলের মহড়ার সময় অনেকে হাজির হতেন রক্তের দাবি নিয়ে। কেউ কেউ মুখের উপর বলেই দিতেন, চ্যাংড়া ছেলের দল ধেই ধেই করে নাটক করছে। রক্ত দিতে পারছে না! তারপর থেকেই রক্ত দেওয়া শুরু। প্রথমে ব্যক্তিগত ভাবে। তারপর তৈরি হল ‘মেদিনীপুর ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’। ফোরামের চেয়ারম্যান হলেন অসীমবাবু। বর্তমানে ওই সংগঠনের সদস্য ৫৫৪ জন। সদস্যপদের একটির শর্ত, রক্ত দেব না, বলা যাবে না। চিকিৎসক না বললে তবেই রক্তদান বন্ধ করা যাবে।

প্রথা মেনে ফোরামের সদস্যরা প্রায়ই শিবির করেন। শিবিরে ফোরামের সদস্যদের পরিজনেরাও রক্ত দেন। অসীমবাবুর স্ত্রী অসীমাদেবীও প্রয়োজন হলে রান্না ফেলে রক্ত দিতে ছুটে যান হাসপাতালে। অসীমবাবুর কথায়, “আমাদের সদস্যরা রক্ত দিতে গিয়ে এক কাপ চাও খাবে না। কেউ দুধ বা ফল খাওয়াতে চাইলে আমরা করজোড়ে জানিয়ে দিই, আমরা তো রোগী নই। এ সব রোগীকে খাওয়াবেন।”

তবে রক্তের সঙ্কট মেটাতে শিবির করতে কম ঝক্কিও পোহাতে হয়নি। তখন ১৯৮৭-৮৮ সাল হবে। সন্ধের পর হাসপাতালে দালালের দাপটে টেকা দায় ছিল। রক্তসঙ্কটের জন্য মেদিনীপুর সদর হাসপাতালে ৩৮ জন রোগীর অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যায়। চিকিৎসকরা অসীমবাবুকে রক্তের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান। এলআইসি মোড়ে শয্যা পেতে তড়িঘড়ি তাঁরা শিবিরের বন্দোবস্ত করে ফেলেন। পথচলতি মানুষের অনেকে শিবিরে রক্তও দেন। সেই ট্রাডিশনই বয়ে চলেছেন অসীমবাবু, জয়ন্তবাবুরা।

রক্তদান নিয়ে ‘শ্রেষ্ঠ দান’ নামে তথ্যচিত্রও বানিয়েছিলেন অসীমবাবু। ১৯৯৩ সালে দূরদর্শনে তা দেখানোও হয়। চিত্রনাট্য থেকে নির্দেশনা- সবই অসীমাবাবুর। কিন্তু খরচ? অসীমবাবুর কথায়, “অভিনেতা, সঙ্গীত শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, ক্যামেরা - সবই নিখরচায় পেয়েছিলাম। এমনকি সহৃদয় ব্যক্তিরা ক্যাসেটও কিনে দিয়েছিলেন।” কিন্তু শ্যুটিংটা সহজে হয়নি। রাতে যখন হাসপাতালে দালালের অভিনয়ের শ্যুটিং চলছে, তখন আসল দালালেরা চড়াও হয়। শেষে পুলিশের সাহায্য নিয়ে শুটিং করতে হয়েছিল! অসীমবাবু যেখানেই যান, সাধারণ মানুষের মধ্যে রক্তদানের উৎসাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। বছর চারেক ধরে মেদিনীপুর স্টেশন সংলগ্ন চায়ের আড্ডাতেও অসীমবাবু বাকিদের সহযোগিতায় একটা ‘টিম’ তৈরি করে ফেলেছেন। এই দল নানা সময় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। আবার বিপদে পড়লে সাধারণ মানুষের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Blood donation Blood Blood Donation camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy