প্রতীকী ছবি।
করোনা কালে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কার্যত গৃহবন্দি স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা। অফুরন্ত এই সময়ে পড়ুয়াদের একাংশ মজেছে সমাজ মাধ্যমে। বহু নাবালক কিশোর-কিশোরী অনলাইনে ‘সঙ্গী’ খুঁজতেও ব্যস্ত। আর অনলাইনের এই ‘ফাঁদে’ পা দিয়েই পূর্ব মেদিনীপুরের মতো শিক্ষায় অগ্রণী জেলায় বহু নাবালিকা বাড়ি থেকে পালাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে পা দেওয়া ওই সব নাবালিকাকে উদ্ধার করতে গিয়ে সমাজকর্মী এবং পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। অন্তত জেলার বিভিন্ন এলাকায় নাবালিকা উদ্ধারের পরিখ্যান সেই তথ্যই জানাচ্ছে।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরে রাজ্যে গত মে থেকে কড়া বিধি নিষেধ জারি করেছিল সরকার। যা ছিল কার্যত লকডাউন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এই মে থেকে জুন মাসের মধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ৩০ জন নাবালিকাকে তারা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে শুধু কাঁথি এবং এগরা মহকুমা এলাকা থেকেই ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে তো নাবালিকাদের ভিন্ রাজ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিখোঁজ নাবালিকার পরিবার অপহরণের অভিযোগ দায়ের করছে। তার ফলে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। বাড়ি থেকে নাবালিকার নিখোঁজের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে পুলিশের কাছে। যেমন, ১৪ এপ্রিল নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কাঁথি-৩ ব্লকের লাউদা গ্রামের এক কিশোরীকে ১৫ জুন উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৮ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ কাঁথি থানার অন্তর্গত গ্রাম গামারতলিয়া গ্রামের এক নাবালিকাকে ১১ জুন ছত্তীশগড় থেকে পাওয়া যায়। ২৭ জুন রামনগর এলাকার এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। মে মাসে কাঁথি, মন্দারমনি উপকূল থানা এবং ভুপতিনগর থানার পুলিশ পৃথক তিন জন কিশোরীকে উদ্ধার করে।
কিছু ক্ষেত্রে আবার বাড়িতে বসে থাকা নাবালিকাকে বিয়ে দিতে চেয়েছে তার পরিবারই। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৫০টি নাবালিকা বিয়ে রুখেছে প্রশাসন। পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় সচেতনতা শিবির আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর এ ব্যাপারে পুনরায় সচেতনতামূলক প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’
রাজ্য জুড়ে নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য এবং বাল্যবিবাহ রুখতে ‘কন্যাশ্রী’ এবং বিবাহযোগ্য মেয়েদের ‘রুপশ্রী’ প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেওয়া চালু করেছে বর্তমান রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও একটানা ছয় বছর ধরে যে জেলা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্যের নিরিখে রাজ্য শীর্ষস্থানে, সেই পূর্ব মেদিনীপুরে নাবালিকাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন সমাজকর্মীরা। কয়েক বছর ধরে বাল্যবিবাহ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা জেলার কাজলা জনকল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর বিবেকানন্দ সাহু বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে উদ্ধার হওয়া বহু কিশোরীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়েছিল। তারা জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় একপ্রকার গৃহবন্দি। স্কুলের বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে না। তাতে অনলাইনে বন্ধুর করার প্রতি আসক্ত হচ্ছে। সেখানই থেকেই নানা প্রলোভনে পা দিচ্ছে তারা।’’
একই কথা বলছেন মনোবিদেরাও। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অলোক পাত্র বলছেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে কম বয়সীরা মানসিক দিক থেকে অনেকখানি একা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবার নিউক্লিয়ার। তাই বাড়িতেও তারা মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার মতো উপযুক্ত কাউকে পাচ্ছে না। তাই অনলাইনে হঠাৎ পরিচয়ের পাত্র বা পাত্রীকে সহজেই আপন করে নিতে চাইছে তারা। এমনকী, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy