কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের কালুরায়বাড় এবং হাজরাকোলার মধ্যবর্তী এলাকায় শয়ে শয়ে ঝাউ গাছ উপড়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্রের ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস আটকাতে দেওয়া হয়েছিল বাঁধ। সমুদ্রের গ্রাস থেকে উপকূল এলাকার জনবসতি বাঁচাতে ঝাউ গাছ লাগিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু সে সব গাছ এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। ঝাউ গাছ বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসন কিংবা বন দফতর কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। ফলে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের হাজরাকোলা থেকে কালুরায়বাড় পর্যন্ত এলাকা বিপন্ন। প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝাউগাছ প্রায় নিশ্চিহ্ন। আসন্ন ষাঁড়াষাঁড়ি বানে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে জনবসতি প্লাবিত হতে পারে বলেই আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আটকাতে দেশপ্রাণ ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশে উপকূলজুড়ে লাগানো হয়েছিল কয়েক হাজার ঝাউগাছ। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের দাপটে সে সব গাছ সমূলে উপড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি একাধিকবার প্রবল ঝোড়ো বাতাসে বেশ কিছু গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। কালুরায়বাড়, হাজরাকোলা, কানাইচট্টার মতো এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে প্রচুর ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে। শশাঙ্ক জানা নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই এলাকায় কোনও স্থায়ী বাঁধ নেই। বালিয়াড়ির পরেই সমুদ্র। ফলে ঢেউ সরাসরি এসে ঝাউগাছগুলিতে ধাক্কা মারে। তাই ঝাউ গাছ টিকছে না।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকিপুট থেকে ভোগপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা একাধিকবার সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়েছে। তাই ওই এলাকায় কংক্রিটে বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু এই তিনটি গ্রামে কমপক্ষে ১৫ হাজার লোকের বাস। এতদিন ধরে ঝাউ গাছের জঙ্গলই ছিল সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষাকবচ। কিন্তু ঝাউয়ের সেই জঙ্গল নষ্ট হতে থাকায় বিপর্যয় যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে বলে আশঙ্কায় এলাকার মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, সমুদ্রের কবল থেকে জনবসতি বাঁচাতে ঝাউবন রক্ষায় কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বন দফতর।
এ বিষয়ে কাঁথি মহকুমা বনদফতরের রেঞ্জ অফিসার প্রবীর কুমার সেন বলেন, ‘‘কালুরায়বাড় এলাকায় বহু ঝাউগাছ উপড়ে গিয়েছে শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বনাধিকারিক স্বাগতা দাসকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। যদিও প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস আটকাতে ওই এলাকায় প্রচুর ব্ল্যাক স্টোন এবং বোল্ডার মজুত করা হয়েছে। আপাতত ওই সব বোল্ডার এবং ব্ল্যাক স্টোন ফেলে বাঁধ দিয়ে ঝাউবন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। স্থানীয় দারিয়াপুর পঞ্চায়েতের প্রধান অসীমা জানা বলেন, ‘‘কিছুদিন ধরেই ঝাউগাছ উপড়ে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে সমুদ্রের ঢেউ যাতে আরও ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বোল্ডার, ব্ল্যাক স্টোন ফেলা হচ্ছে।’’ যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্ল্যাক স্টোন এবং বোল্ডার আলগাভাবে বাঁধের উপর ফেলে রাখলে সেগুলিও সমুদ্র ঢেউয়ে ভেসে যাবে। তাঁদের দাবি, ওইসব বোল্ডার এবং ব্ল্যাক স্টোন লোহার তারের খাঁচা তৈরি করে তার মধ্যে ফেলা হোক।
দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত যাতে বোল্ডার এবং ব্ল্যাক স্টোন দিয়ে ঝাউবন রক্ষা করা যায় তার চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy