যুগপোযোগী পড়াশোনায় উৎসাহ দিতেই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। গতবছর দুর্গাপুজোর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ৭৮ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছিল ৩২,২৪৮ জন। তারাই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মাস পাঁচেক আগে ট্যাবের ১০ হাজার টাকা পাওয়ার পরেও এ বার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে বসেনি ১,৯৯১জন ছাত্রছাত্রী।জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০,২৫৭জন। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলার শিক্ষক মহল। বিষয়’টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাপরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
জেলা শিক্ষা দফতর ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় ট্যাব কেনার জন্য। গত বছর ৪ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুরে একাদশ এবং দ্বাদশ মিলিয়ে ৭৭,৮৬৭জন ছাত্রছাত্রীকে সেই টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। ট্যাবের টাকা নেওয়ার পরেও যে ১,৯৯১ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন না অর্থাৎ স্কুল ছুট হয়েছেন, পরীক্ষার প্রথম দিনে তাঁদের নিয়ে চর্চা চলল। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অপর্ণা ভট্টাচার্য মানছেন, ‘‘জেলায় দ্বাদশ শ্রেণির যতজন পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পেয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রায় দু’হাজার পড়ুয়া এবার উচ্চ মাধ্যমিকে বসেননি। এটা খুবই উদ্বেগের। কেন এত ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে না, তা বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হবে।’’ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক তথা বরনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর ভৌমিক বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে । তবে জেলার মোট ৪৭৫ টি হাইস্কুলের মিলিয়ে প্রায় ৩২ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে এই সংখ্যক পড়ুয়া পরীক্ষা না দেওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়।’’
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক বামদেব গুছাইতের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থা দিশাহীন। ছাত্রছাত্রীদের সামনে ভবিষ্যতের দিশা নেই। তাই তা আগ্রহ হারাচ্ছে।’’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’-এর জেলা সভাপতি তথা তমলুকের কেলোমাল সন্তোষিনী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় মাজির বক্তব্য, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী স্কুলছুট হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের।’’
কিন্তু ট্যাবের টাকা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগে পড়াশোনা ছাড়ল কেন? মৃন্ময়ের জবাব, ‘‘আমাদের স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ৭৩ জন ছাত্রছাত্রী ট্যাবের টাকা পেয়েছিল। আর উচ্চ মাধ্যমিকের ‘ফর্ম’ পূরণ’করে ৬৮ জন। এর মধ্যে সোমবার পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে ৬২ জন। অর্থাৎ ট্যাবের টাকা পেয়েও ১১ জন পরীক্ষায় বসেনি। আমরা ওই ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ছাত্রদের বেশিরভাগ বিভিন্ন কাজে চলে গিয়েছে। আর এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)