খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ভাদুতলা বিবেকানন্দ হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে গরমের ছুটি বেড়ে দেড় থেকে প্রায় দু’মাস। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই সিদ্ধাম্ত জানিয়েছে সরকার। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, অভিভাবকরাও। অনেক স্কুলই খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্কুল খুললে প্রথম পার্বিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। সবই থমকে গেল।
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে ঢালাও নম্বর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালাবন্ধ দীর্ঘ প্রায় দু'মাস। অভিভাবকেরা বলছেন, লেখাপড়া নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে। শ্যামলাল টুডু দশম শ্রেণিতে পড়ে। পরের বছর মাধ্যমিক। গোয়ালতোড়ের ধামচা ছাগুলিয়া সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র স্কুলে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর খবরে প্রথমে বিশ্বাসই করছিল না। পরে সে বলে, "আমাদের মতো অনেকের বাড়িতে পড়ানোর লোক নেই। বেশি টিউশনও নিতে পারিনি। স্কুলই ভরসা। টানা ছুটি হলে মাধ্যমিকে কী লিখব!" এই স্কুলের দর্শনের শিক্ষক বিপ্লব মাহাতোরও মন্তব্য, "গ্রামাঞ্চলে আর্থিক সঙ্গতিহীন ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘ ছুটিতে বেশি সমস্যায় পড়ছে।" ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক পঙ্কজ ভুঁইয়ার মতে, ‘‘স্কুলের হাতে সময় না থাকায় প্রথম পর্বের পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হবে না। ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে পড়বে।"
সোমবার থেকে অনেক স্কুলই খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছিল । ক্লাসঘর খুলে সাফসুতরো করতে উদ্যোগী হন গোয়ালতোড়ের কিয়ামাচা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক অনুপকুমার পড়িয়া বলেন, ‘‘লোক লাগিয়ে ক্যাম্পাস সাফাই করা হত। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে কাজ স্থগিত রাখতে হল।’’ ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলে প্রথম পর্বের পরীক্ষার প্রস্তুতিও স্থগিত। ছ'মাস পার, শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও প্রথম পর্বের মূল্যায়ন না হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে পড়ুয়া থেকে অভিভাবক— সবার মধ্যেই। খড়্গপুরের ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভ্রনীল দে। তাঁর বাবা স্কুল শিক্ষক শিবপ্রসাদ দে বলেন, ‘‘চার ঘন্টা স্কুল খুলেও অন্তত কিছুটা অবস্থা সামলানো যেত।’’
সরকারি নির্দেশিকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক সংগঠনগুলিও। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলছেন, ‘‘শিক্ষাকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আজ প্রমাণিত সত্য। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদে নামতেই হবে।’’ উত্তরবঙ্গের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন মেদিনীপুরের এক বাসিন্দা। ছুটি থাকায় বাড়ি এসেছিলেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছিলাম। ছুটি বেড়েছে জানার পরে বাতিল করলাম।’’ তবে তিনিও বলেন, ‘‘স্কুল খুলে দেওয়াটা দরকার ছিল। ছেলেমেয়েরা অনেক দিন স্কুলের মুখ দেখেনি।’’ মেদিনীপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আবার আশঙ্কা, ‘‘এমন ছুটি চলতে থাকলে স্কুলছুট বাড়তে পারে।’’ সরকারি নির্দেশিকায় অসন্তোষ দানা বাঁধছে বিরোধী দলের শিক্ষক সংগঠন গুলির মধ্যেও। ঘাটাল লছিপুর হাইস্কুলের শিক্ষক বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-ঘাটাল জ়োনের সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, "ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে।’’ এবিটিএ-র ঝাড়গ্রাম জেলার সম্পাদক চঞ্চল সাঁতরা বলেন, "গরমকালে গরম, শীতকালে শীত, বর্ষার সময় বৃষ্টি হবে। আগে স্কুল খুলে দু'-একদিন দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। এখন পরিস্থিতি দুর্বিষহ।’’ শিক্ষার এই অবস্থার ফলে সরকার অনুমোদিত স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠানোর ইচ্ছে কমে যাবে বলে মনে করেন এই বাম শিক্ষক নেতা। তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা চেয়ারম্যান গড়বেতার শান্তনু দে ছুটির নতুন নির্দেশিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য না করেও বলেন, ‘‘লম্বা ছুটিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার অভ্যাস যাতে নষ্ট না হয়, তা দেখতে হবে।’’
ঝাড়গ্রাম লায়ন্স মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত বসুর প্রশ্ন, "ছুটি এ ভাবে বাড়লে সিলেবাস শেষ হবে কী করে?’’ আবার দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মৃণ্ময় হোতা বলেন, ‘‘প্রথম পর্বের পরীক্ষার জন্য আমরা নোটিস দিয়েছিলাম। সকালে স্কুল খোলা হলে পড়ুয়ারা উপকৃত হত।" বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর, লালগড়, নয়াগ্রামের মতো ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার অনেক পড়ুয়া স্কুল বন্ধে পড়ার অনভ্যাস বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy