মণীশ তালধি। নিজস্ব চিত্র
নিজের ‘সুবর্ণরৈখিক’ ভাষার প্রতি তাঁর অসীম ভালবাসা। একই সঙ্গে এলাকার নদী ও জঙ্গলও তাঁর আপনজন। কিন্তু সুবর্ণরেখা নদী থেকে যথেচ্ছ বালি তোলায় ভাঙছে পাড়। এই ভাবে চললে নদী গতিপথ পাল্টে জনপদ গ্রাস করে নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। নির্বিচারে গাছ কাটায় হারিয়ে যাচ্ছে সবুজও। এসব নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতেই রাজ্যভ্রমণে বেরলেন জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের বছর চব্বিশের তরুণ মণীশ তালধি। সঙ্গী সাইকেল।
মণীশের বাড়ি গোপীবল্লভপুরের প্রত্যন্ত শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে। আঞ্চলিক ভাষা, নদী আর অরণ্য বাঁচানোর বার্তা নিয়ে আগামী চার মাস ধরে সাইকেলে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলার নদী তীরবর্তী ও জঙ্গল লাগোয়া লোকালয় ছুঁতে চান তিনি। মণীশের স্বপ্ন সফল করতে পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর গ্রামের ক্লাব শ্যামসুন্দরপুর সবুজ সঙ্ঘ। এছাড়াও সুবর্ণরৈখিক ভাষা চর্চা সংক্রান্ত ‘আমারকার ভাষা, আমারকার গর্ব’ গোষ্ঠী-সহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিশিষ্টজনও আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সাইকেলে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন মণীশ। সোমবার শ্যামসুন্দপুর থেকে ঝাড়গ্রামে পৌঁছন। মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মণীশ বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার সবাই সুবর্ণরৈখিক ভাষায় কথা বলেন। অনেকে বাইরের লোকজনের কাছে নিজের ভাষায় কথা বলতে সঙ্কোচবোধ করেন। সুবর্ণরৈখিক ভাষা যথেষ্ট সমৃদ্ধ, আমাদের ঐতিহ্য, গর্বও। নিজের ভাষার সঙ্গে রাজ্যের মানুষের পরিচয় করানোর পাশাপাশি, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক ভাষাগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে সাইকেল ভ্রমণে বেরিয়েছি। সেইসঙ্গে জঙ্গল ও নদীর পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতন করার চেষ্টা করছি।’’
মণীশের বাবা অজিত তালধি পেশায় পুরোহিত। মা রুমারানি সংসার সামলান। দাদা মলয় ঝাড়গ্রামের জিতুশোলে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। বাড়িতে বাবা-মা-দাদা-বৌদি আর খুদে ভাইঝিকে নিয়ে মণীশের সংসার। এলাকার স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পারিবারিক সমস্যার কারণে দ্বিতীয় বর্ষের পরে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁর জেঠু উৎপল তালধি জেলার নামি কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। সেই সুবাদে সাহিত্যের অনুরাগী মণীশ এ বছর মার্চে গ্রাম থেকে প্রায় দু’শো কিলোমিটার পথ সাইকেলে উজিয়ে ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কলকাতা বইমেলায়। মণীশের কথায়, ‘‘সাইকেলে কলকাতা গিয়ে মনে হয়েছিল এরপর রাজ্যভ্রমণও করতে পারব।’’
সুবর্ণরৈখিক ভাষা গবেষক তথা গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা কলেজের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান লক্ষীন্দর পালোই বলছেন, ‘‘সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষজন যে ভাষায় কথা বলেন সেটি সুবর্ণরৈখিক ভাষা। এই ভাষায় বেশ কিছু সাহিত্যসৃষ্টিও হয়েছে। এই ভাষা নিয়ে গবেষণাও চলছে। মণীশের সাইকেল যাত্রার ফলে রাজ্যের বহু মানুষ সুবর্ণরৈখিক ভাষা সম্পর্কে জানতে পারবেন এটা ভেবে ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy