Advertisement
E-Paper

স্বজন হারিয়ে বাজি থেকে পান দোকান

সেদিনটা আজও ভুলতে পারেননি রামচন্দ্র। বছর কয়েক আগে বাড়ি তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটেছিল রামচন্দ্রের বাড়িতে। উড়ে গিয়েছিল পুরো বাড়ি। রামচন্দ্রর স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, নাতনি মারা যায়। সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি।

নিজের দোকানে রামচন্দ্র। নিজস্ব চি

নিজের দোকানে রামচন্দ্র। নিজস্ব চি

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৭
Share
Save

কেউ মাছের ব্যবসা করেন। কারও পা-বিড়ি দোকান। সংসারে খাওয়া-পরার খরচ আসে সেখান থেকেই। কালীপুজোর সময় এঁদের পরিচিত অনেকে বেশি রোজগারের তাগিদে বাজি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু কাঁথির শিলামপুর গ্রামের অজয় প্রধান, তপন প্রধান কিংবা হিরাকনিয়া গ্রামের রামচন্দ্র কামিলা বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকলেও ওই পথে আর পা বাড়াতে চান না।

সেদিনটা আজও ভুলতে পারেননি রামচন্দ্র। বছর কয়েক আগে বাড়ি তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটেছিল রামচন্দ্রের বাড়িতে। উড়ে গিয়েছিল পুরো বাড়ি। রামচন্দ্রর স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, নাতনি মারা যায়। সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা আজও কুরে কুরে খায় রামচন্দ্রকে। যে বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল, সেখানে পাকা ইট দিয়ে নতুন ঘর করেছেন। আপাতত আর এক ছেলে, নাতনি আর বৌমাকে নিয়ে কষ্টের সংসার চালান। আয় বলতে সামান্য পান-বিড়ির দোকান।

আগে কালীপুজো এলেই বাজি বানানোর জন্য নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতেন অজয়। কিন্তু বার বার পুলিশের ঝামেলা আর মোটা টাকা জরিমানা দিয়ে ব্যবসা চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অগত্যা পেট চালাতে বেছে নিয়েছেন মাছের ব্যবসা। জানালেন, ‘‘পুলিশের ঝামেলা থেকে বেঁচেছি। তা ছাড়া বাড়ির লোকজনও চাইছিল না।’’ পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে বাজি তৈরি থেকে সরে এসেছেন তপনও। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ এসে শুধু জরিমানাই করতে না। বাজির তৈরির মালমশলাও নিয়ে চলে যেত। বাজি তৈরির কাজে টাকা লাগিয়ে লাভের বদলে কতদিন আর ক্ষতি সইব।’’ সোনার গয়না তৈরির কাজ শিখে এখন নিজেই ছোট গয়নার দোকান খুলেছেন তপন।

তবে তিনজনেই একমত, যখন এই পেশায় ছিলেন তখন দুগার্পুজো মিটলে আর দম ফেলার ফুরসত পেতেন না কালীপুজো না যাওয়া পর্যন্ত। এঁদের তৈরি বাজি বিক্রি হত কাঁথি এবং এগরা মহাকুমা জুড়ে। তবে পুলিশের ঝামেলার কারণে অজয়, তপন বাজি তৈরির পেশা ছড়লেও রামপদর জীবনের কাহিনী অন্য। কাঁথি শহর থেকে ১০ কিমি দূরে প্রত্যন্ত এলাকা হিরাকনিয়া। সেখানেই পাকা রাস্তার পাশে ছোট্ট পান-বিড়ির দোকান রামচন্দ্রের।

আর বাজি তৈরি করেন না? প্রশ্নটা শুনে কেঁদে ফেলেন রামচন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘সব শেষ হয়ে গেছে। বাজি নিয়ে আর কোনও কথা বলব না।’’ একটু পরেই চোখ মুছে বলেন, ‘‘কেন বাজি তৈরি করব বলতে পারেন। ওই বাজি আমার সব কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে আমার স্ত্রী, এক ছেলে, বৌমা আর নাতনিকে। তাই আর ওই পথ মাড়াই না। এই দোকান করেই কোনওরকমে চলে যায়।’’

যাঁরা বাজি তৈরি ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পঞ্চায়েত বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি বলেও অভিযোগ।

স্থানীয় বাদলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ মহাকুড় বলেন, ‘‘অধিকাংশই এখন বাজি তৈরি বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের মতো বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছে। তবে সরকারি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার জন্য আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেননি।’’

Contai Firecracker Accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।