Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

মমতার ডাক, ফের কি বাড়ছে অখিলের প্রভাব

প্রসঙ্গত, ১১ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুধবারের মধ্যে ১৪০টি হোটেল আর লজ ভেঙে ফেলতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২
Share: Save:

মন্দারমণিতে ১৪০টি হোটেল ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার হোটেল মালিকদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কোনওভাবেই বুলডোজার চালাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পেছনে ভোটের অঙ্ক দেখছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত, ১১ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুধবারের মধ্যে ১৪০টি হোটেল আর লজ ভেঙে ফেলতে হবে। এর বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘কেন ওইসব হোটেলকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? যদি প্ল্যান অনুমোদন হয়ে থাকে তাহলে কেন তা বাতিল করা হবে? আবার যদি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়, তা হলে মাঝখানে যেন রফা না হয়ে যায়।’’ এর পর দ্রুত ঘটনার পট পরিবর্তন হতে শুরু করে। এলাকার বিধায়ক অখিল গিরিকে তড়িঘড়ি নবান্ন ডেকে পাঠানো হয়।

নবান্নে অখিলের সঙ্গে মুখ্য সচিব মনোজ কুমার পন্থ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের অখিলকে আশ্বস্ত করেন, কোনও হোটেল ভাঙা হবে না। এ কথা অখিল যেন হোটেল মালিকদের জানিয়ে দেন, সেটাও বলা হয়। সন্ধ্যায় ফিরে মন্দারমণিতে হোটেল মালিকদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন অখিল। নবান্ন সূত্রে দাবি করা হয়, জেলাশাসকের নির্দেশ সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছেন। কিন্তু ২০২২ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই মামলায় রাজ্য সরকার অংশ নিয়েছিল। তারপরও কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে অন্ধকারে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

এ বছর লোকসভা নির্বাচনে মৎস্যজীবী অধ্যুষিত রামনগরে পিছিয়ে যায় শাসক দল। তারপর ফের হোটেল ভাঙা হলে আগামী বিধানসভা ভোটে ঘাসফুল শিবিরের উপর তার প্রভাব পড়বে—এমন আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলায় অখিলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছে শাসকদলের একাংশ।

গত অগস্টে মহিলা বন আধিকারিককে কু-কথা বলে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন অখিল। তাঁকে মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার পর অখিলের বিরোধী শিবিরের নেতা তথা পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিকের প্রশংসাও করেন মমতা। এ বার মন্দারমণি ঘটনায় অখিলকে ডেকে পাঠানো এবং তাঁকে সামনে রেখে সাংবাদিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত আসলে জেলা তৃণমূলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা বলেই মনে করছেন অনেকে।

দলে কি গুরুত্ব বাড়ছে? অখিল বলছেন, ‘‘আমি নেত্রীর সঙ্গে প্রথম থেকেই রয়েছি। সব দিন থাকব। আমার গুরুত্ব কোনও দিন কমেনি। আমি যা ছিলাম, একই রয়েছে।’’ তবে স্থানীয় সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী বলছেন, ‘‘তৃণমূলে কার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেল বা কমল, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।’’

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে বামেদের হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। আগামী ২০২৬ সালের রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে মন্দারমণিকে হাতিয়ার করে শুভেন্দু নতুন করে জেলায় আন্দোলন করতে পারেন, এমনটাও ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিরোধী নেতার হাতে সেই অস্ত্র তুলে দিতে রাজি হননি তৃণমূল নেত্রী তথা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ ব্যাপারে সৌমেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, এক-এক জন হোটেল মালিকের সঙ্গে কত টাকার রফা হয়ে গিয়েছে। গোড়াতে টাকার বিনিময়ে আটকানো হয়নি। এখন আবার বেআইনি হোটেলের নাম করে টাকা তোলা হচ্ছে।’’ যদিও অখিল বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আর মুখ্য সচিব কেউই জানতেন না হোটেল ভাঙার নির্দেশ সম্পর্কে। রাজ্য সরকার কোনওভাবেই ভাঙার পক্ষে নয়। মুখ্যমন্ত্রী যে পর্যটনের প্রতি মানবিক, তা আরও একবার এখানকার মানুষ
বুঝতে পেরেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Akhil Giri Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy