মেদিনীপুরের মোহনানন্দ বিদ্যামন্দিরে। বুধবার।
এই বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমে গিয়েছে। এতে কমবেশি সঙ্কটে পড়েছে প্রায় সব পরীক্ষাকেন্দ্রও। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এই সব ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হবে, ভেবে পাচ্ছে না অনেক স্কুল।
জেলার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘আমাদের স্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষা ঘিরে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়ই। এ সব খাতে অর্থের সংস্থান কী ভাবে করব, বুঝে উঠতে পারছি না!’’ তিনি জানাচ্ছেন, এ বার পরীক্ষার্থী কমে গিয়েছে। তাই এই সমস্যা আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কট বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পশ্চিম মেদিনীপুরের মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক রাজীব মান্না অবশ্য বলছেন, ‘‘স্কুলগুলি ঠিক চালিয়ে নেবে! সমস্যা হবে না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে গত বছরের থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমেছে ২১,২৭৫ জন। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৫৯,৫৫১ জন। এ বার সেখানে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩৮,২৭৬ জন। কমেছে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যাও। গতবার জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ২৫৭টি। এ বার সেখানে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ১৩১টি। অর্থাৎ, ১২৬টি পরীক্ষাকেন্দ্র কমেছে।
সমস্যা কোথায়? স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরীক্ষাকেন্দ্র পিছু পরীক্ষার্থী কমেছে। সমস্যা এখানেই। পরীক্ষা খাতে পরীক্ষাকেন্দ্র যে টাকা পাবে, সে টাকায় পরীক্ষা ঘিরে ওই সব যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে স্কুলের তহবিলের টাকাও খরচ হয়ে যাবে। প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস্ অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস্’- এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার সভাপতি অমিতেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি যে টাকা পায়, সে টাকায় সবকিছু চালানো যায় না। অর্থের সংস্থানের প্রশ্ন উঠবেই। পর্ষদের উচিত, বিষয়টি ভাবা। বরাদ্দ বাড়ানো।’’
খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি পরীক্ষার্থীপিছু ৪০ টাকা করে পায়। এরমধ্যে সেন্টার ফি বাবদ ২০ টাকা। আর পর্ষদ দেয় ২০ টাকা। পরীক্ষাকেন্দ্রের খরচ কী? গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ রয়েছে। প্রশ্নপত্র নিয়ে আসা, পরবর্তীতে উত্তরপত্র জমা করা—এই দুই কাজই করতে হয় পরীক্ষাকেন্দ্রকে। এর জন্য গাড়ি ভাড়া করতে হয়। পরীক্ষার সময়ে স্কুলে কয়েকজন করে পুলিশকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী থাকেন। স্কুলকেই তাঁদের টিফিন, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এ বার আবার প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রকে ন্যূনতম তিনটি করে সিসি ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যে পথ দিয়ে ঢুকবে, প্রধান শিক্ষকের ঘরে এবং প্রশ্নপত্র যে ঘরে রাখা হবে, মূলত এই তিনটি ঘরেই একটি করে সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা জানানো হয়েছে। অনেক স্কুল সিসি ক্যামেরা ভাড়ায় নিয়েছে। এতে ৪- ৫ হাজার টাকা খরচ রয়েছে।
খড়্গপুর গ্রামীণের মেউদিপুর হাইস্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এখানে পরীক্ষার্থী ২৩৯ জন। পরীক্ষার্থী পিছু ৪০ টাকা করে পাওয়ার কথা পরীক্ষাকেন্দ্রের। সেই সূত্রে এই কেন্দ্রটির পাওয়ার কথা ৯,৫৬০ টাকা। স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, এই টাকায় ওই সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অসম্ভব। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রলয়কান্তি সাঁতরা বলছেন, ‘‘হিসেব হয়। বাজেট হয়। তাতেও ওই টাকায় চালানো যায় না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, শুধু গাড়ি ভাড়া বাবদই ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। একাংশ পরীক্ষাকেন্দ্রের দাবি, পরীক্ষা পরিচালনায় তাদের খরচ হয় ৩০- ৪০ হাজার টাকা। বাকি টাকা খরচ করতে হয় স্কুলের তহবিল থেকেই। জেলার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোনাচ্ছেন, ‘‘সেন্টার ফি হিসেবে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। সেই টাকা থেকে নিযুক্ত কর্মীদের বড়জোর চা-বিস্কুট খাওয়ানো যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়!’’
পর্ষদের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, ‘‘এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার পদ্ধতির মূলগত কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু আয়োজনের ক্ষেত্রে কিছু বদল করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা রাখার মতো কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য একটাই, স্বচ্ছ পরীক্ষা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আর এ কাজে যে কোনও রকম অসহযোগিতায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy