লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে মানসের দেওয়াল লিখন। মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট মাঠে। নিজস্ব চিত্র
একদা সহজ আসনই এখন বেশ কঠিন।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের কয়েকটি বিধানসভায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি ও দলীয় কোন্দল ভাবাচ্ছে জোড়াফুল শিবিরকে। তাই খড়্গপুর সদর, কেশিয়াড়ি ও নারায়ণগড় এই তিনটি বিধানসভা এলাকায় প্রচারে বিশেষ জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। সেই ছক মাথায় রেখেই চলছে রণনীতি তৈরি। রাজনীতির ময়দানে পোড়খাওয়া মানস এখন চাইছেন, নানা কারণে বসে যাওয়া কর্মীদের সক্রিয় করতে।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের বদলে মানস ভুঁইয়াকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অভিনেত্রী সন্ধ্যা মেদিনীপুরে খুব বেশি আসতেন না বলে দলীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। এ বার চেনা রাজনৈতিক মুখকে প্রার্থী চেয়েছিলেন তাঁরা। মানস এখন রাজ্যসভার সাংসদ। তাঁকে মেদিনীপুরে প্রার্থী করার পিছনে স্থানীয় স্তরে দলীয় কোন্দল আটকানোর চেষ্টা রয়েছে বলে মনে করেছে জেলার রাজনৈতিক মহল। স্বাভাবিকভাবে মানসবাবুর কাছেও এই নির্বাচন সম্মান রক্ষার লড়াই। তিনি বলছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের গলা টিপে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে স্তব্ধ করা হচ্ছে। বিপ্লবী মেদিনীপুর, মিনি ইন্ডিয়া খড়্গপুর, আদিবাসী অধ্যুসিত কেশিয়াড়ির মানুষ কী এগুলি মেনে নেবেন? খড়্গপুরে রেলের উন্নয়ণের জন্য কী কোনও কাজ করেছে বিজেপি? এই প্রশ্নগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরাই আমার কর্তব্য।”
মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে রয়েছে এগরা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর সদর, খড়্গপুর গ্রামীণ, নারায়ণগড় ও মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্র। গত লোকসভায় মেদিনীপুর কেন্দ্রে নিকটতম বাম প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধান ছিল ১,৮৫,১২৮। তার মধ্যে খড়্গপুর সদর বাদে সব কটি আসনেই ‘লিড’ পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে খড়্গপুর সদর আসনে তৃতীয় হতে হয় তৃণমূলকে। সেই আসনে জয়ী হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দলের রাজ্য সভাপতি স্থানীয় বিধায়ক হওয়ায় খড়্গপুর সদর এলাকায় পরবর্তীকালে নিজেদের সংগঠন বাড়িয়েছে বিজেপি। সংগঠন বেড়েছে কেশিয়াড়ি ও নারায়ণগড়েও। তার প্রমাণ মিলেছে গত পঞ্চায়েত ভোটে। সেই ভোটে কেশিয়াড়ির ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টিই গিয়েছে বিজেপির দখলে। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় গেরুয়া শিবির। তবে সেই বোর্ড এখনও গঠন হয়নি। বিজেপির দাবি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তাদের বোর্ড গড়তে দিচ্ছে না তৃণমূল। এই টানাবাহালায় যে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ওই এলাকায় কিছুটা হলেও নষ্ট হয়েছে সেটা আড়ালে দলের নেতারাও মানছেন। নারায়ণগড়ে গত লোকসভায় তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল প্রায় ২৬ হাজার। ২০১৬ সালের বিধানসভায় সেই ‘লিড’ কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজারে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নারায়ণগড়ে বিধানসভা এলাকার একটি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। আরও কয়েকটি পঞ্চায়েতেও তাদের ফল ভাল হয়েছে।
বিজেপির মাথাচাড়া দেওয়ার সঙ্গে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সম্প্রতি নারায়ণগড়ের মকরামপুর তৃণমূলের একটি কার্যালয়-সহ দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনায় উঠে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। নারায়ণগড় ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “আমাদের গোষ্ঠীকোন্দলের জন্যই বিজেপি বাড়তে পেরেছে। তাছাড়া পরপর বোমা বিস্ফোরণেও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত জেলা তৃণমূলও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “খড়্গপুর, কেশিয়াড়ি ও নারায়ণগড়ে আমরা সংগঠনকে আগের তুলনায় অনেক মজবুত করেছি। তবে ওই তিনটি বিধানসভায় প্রচারে বেশি জোর দেব।” মানসের কথায়, ‘‘লড়াইটা রাজনৈতিক দর্শনের। আমাদের দলের যেসব কর্মী-সমর্থক বিভ্রান্ত হয়ে নীরব হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের সরব করতে হাত ধরে আবেদন করব। তাঁদের কাছে পৌঁছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy