Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষুব্ধ মাটিতে ফুটেছে পদ্ম

লোকসভার যুদ্ধে জরুরি বিধানসভার অঙ্ক। সেই সমীকরণেই আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে জনতার দরবারে। তিন বছর আগের ভোটের পরে কী পেয়েছেন মানুষ, সাংসদ নির্বাচনের আগেই বা কী ভাবছেন তাঁরা, রইল বিধানসভাওয়াড়ি পর্যালোচনা। তিন ব্লকে ২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত গোপীবল্লভপুর বিধানসভা এলাকায় উন্নয়ন নিয়ে শাসকদলের নানা দাবি রয়েছে। লোধাশুলিতে জাতীয় সড়কের ধারে ‘পথসাথী’ সেই দাবি জোরাল করছে।

 সেতু পায়নি চুবকা। বাঁশের সাঁকোই ভরসা চুবকায়। নিজস্ব চিত্র

সেতু পায়নি চুবকা। বাঁশের সাঁকোই ভরসা চুবকায়। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

এক দিকে কংসাবতী, অন্য দিকে সুবর্ণরেখা। এই তল্লাটে একটা সময় তার জেরে রাস্তার ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু যথেচ্ছ বালি বোঝাই লরি চলাচল কমেনি, ফলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগও কমেনি। বরং আরও বেড়েছে।

তিন ব্লকে ২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত গোপীবল্লভপুর বিধানসভা এলাকায় উন্নয়ন নিয়ে শাসকদলের নানা দাবি রয়েছে। লোধাশুলিতে জাতীয় সড়কের ধারে ‘পথসাথী’ সেই দাবি জোরাল করছে। সমানতালে স্বজনপোষণ আর সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। আর তার জেরে জমা হওয়া পাহাড় প্রমাণ ক্ষোভে আভাস মিলেছে গত পঞ্চায়েত ভোটে। অভিযোগ, এলাকার বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো আগে চাষ করতেন। সেই চূড়ামণিই মন্ত্রী হওয়ার পরে মানুষের থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে চূড়ামণির নিজের এলাকা ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড়শালবনি পঞ্চায়েতের সব ক’টি আসনে পদ্মফুল ফুটেছে। চুড়ামণির নিজের গ্রামের বুথেও তৃণমূল গো-হারা হেরেছে। পাশের নেদাবহড়া আর লোধাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতও দখল করে নিয়েছে বিজেপি। ফলের ঘায়ে গত বছরই মন্ত্রিত্ব গিয়েছে চূড়ামণির।

এই বিধানসভা এলাকার মধ্যে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক নেই। রয়েছে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত, সাঁকরাইল ব্লকের ১০টি এবং গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত ভোটে এই ২৩টির মধ্যে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতই দখল করেছে তৃণমূল। বাকি ৯টিতে পদ্ম ফুটেছে। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতিও পেয়েছে বিজেপি। আর বিধানসভার ৪টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৩টি ও বিজেপি ১টি। এই হিসেবেই স্পষ্ট শাসকের ভোট ব্যাঙ্কে কিছুটা ধস নেমেছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোপীবল্লভপুর বিধানসভায় তৃণমূলের গড় ভোট ছিল ৫৩.৩৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের ভোটের হার বেড়ে হয় ৫৫.৫১ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১৪-র ভোটে এই বিধানসভায় বিজেপির গড় ভোট ছিল ১০.৫৩ শতাংশ। ২০১৬-র বিধানসভায় তা বেড়ে হয় ১১.৮১ শতাংশ। আর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি-র ঝুলিতে এসেছে ৪২ শতাংশ ভোট, সেখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৪৩ শতাংশ।

গেরুয়া শিবিরের এই উত্থানের পিছনে একটা বড় কারণ যে উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ, তা এলাকায় কান পাতলেই টের পাওয়া যায়। নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখা ও লালগড়ে কংসাবতীর উপর সেতু তৈরিকে বিশেষ সাফল্য হিসেবে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ গোপীবল্লভপুর বিধানসভায় আরেকটি সেতুর দাবি বহু বছর ধরে উপেক্ষিত। চুবকার আমদই আর মেদিনীপুরের কনকাবতীর মধ্যে কংসাবতীতে বাঁশের সাঁকোই বছরভর ভরসা। এখান থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা সদর অনেকটা দূরে, তুলনায় মেদিনীপুর শহর কাছে। আমদই ঘাটে সেতু হলে সরাসরি মেদিনীপুরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি কমে যাবে। চুবকায় কংসাবতীতে আবার রয়েছে বালি খাদান। সেই খাদানের বালিবাহী লরি চলাচলেই রাস্তা দফারফা। পেটবিন্ধি ও বেলিয়াবেড়াতেও সুবর্ণরেখায় রয়েছে একাধিক বালি খাদান। বালির লরি যাতায়াতের ফলেই সম্প্রতি বাম আমলে তৈরি ডুলুংয়ের উপর বড়ামারা সেতু বিপজ্জনকভাবে বসে গিয়েছে। ফলে, ঝাড়গ্রাম জেলা সদরের সঙ্গে সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার সহজ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

ক্ষোভ রয়েছে আরও। সর্ডিহা ও নেদাবহড়া পঞ্চায়েতে হাইস্কুল নেই। সাঁকরাইল ব্লকের ধানশোলা, বালিভাসা, কুবদা, পচাখালির মতো আদিবাসী-মূলবাসীদের গ্রামগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, পাতকুয়োই ভরসা। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোড লাগোয়া লোধাশুলি, যেখানে রোজ বাস, লরি-সহ কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে, সেখানেই কোনও সুলভ শৌচাগার বা যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। পথসাথী তৈরি হয়েছে লোধাশুলি চৌমাথা থেকে অনেকটাই দূরে জঙ্গলের কাছে।

এই সব না পাওয়া আর সর্ডিহা, চন্দ্রির মতো গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধানদের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে ধাক্কা দিয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ঝাড়গ্রামে এসে বলছেন, ‘‘যদি কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজে বলছি ভবিষ্যতে আর হবে না।’’ বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বাধায় অনেকে ভোট দিতে পারেননি। তাও যাঁরা দিয়েছিলেন, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সঙ্গে মানুষও নেই, মাটিও নেই।’’

গোপীবল্লভপুরের মাটি লোকসভায় কার দখলে থাকে, নজর এখন সে দিকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy