অবস্থান বিক্ষোভের পোস্টার।
নতুন দাবিতে জোরদার হচ্ছে জঙ্গলমহলে কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলন। স্লোগানও নতুন ‘দিয়াকে দিয়া, নাই দিয়াকে হুড়কা দিয়া’— যার মর্মার্থ: ‘দিলে আমরাও দেব, না দিলে দরজা বন্ধ করে দেব।’
আদিবাসী তালিকা ভুক্তি, কুড়মালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সারনা ধর্মের কোড-সহ স্বীকৃতির পুরনো দাবিগুলির পাশাপাশি এ বার কুড়মিদের জন্যও ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন লাগুর দাবিতে সরব হবে একাধিক কুড়মি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ’। ব্রিটিশ আমলে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন (সিএনটি অ্যাক্ট) তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি, পরাধীন ভারতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জনজাতির আন্দোলনের ‘প্রথম শহিদ’ রঘুনাথ মাহাতোকে ইতিহাসে যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বাধীনতা যোদ্ধার স্বীকৃতির দাবিও তোলা হবে।
দাবি আদায়ে জোরদার আন্দোলনের জন্য ইতিমধ্যে চারটি কুড়মি সংগঠন মিলে তৈরি করেছে কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ। আগামী ৭ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের কার্যালয়ে সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান বিক্ষোভের ডাকও দিয়েছে ওই কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ। সমন্বয় মঞ্চের তরফে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা-সহ জঙ্গলমহলের সর্বত্র পোস্টার সাঁটিয়ে এই কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে কুড়মিদের এমন আন্দোলন রাজ্য সরকারকে যথেষ্ট চাপে ফেলতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
পরাধীন ভারতে কুড়মিরা ছিলেন জনজাতি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জনজাতি (এসটি) তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুড়মিরা। এখন কুড়মিরা ওবিসি (আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস) শ্রেণিভুক্ত। আদিবাসী তালিকাভুক্তি, কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি, সারনা ধর্মের কোড চালুর দাবিতে বিভিন্ন কুড়মি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ বার তাদের নতুন কর্মসূচি, বিশেষ করে ভোটের আগে চাওয়া-পাওয়ার স্লোগান ভাবাচ্ছে শাসকদলকে। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো নিজে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। চূড়ামণি বলছেন, ‘‘কুড়মিদের মূল দাবিগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমোদন প্রয়োজন। রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রী কুড়মিদের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। এ রাজ্যে কুড়মালিকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কুড়মিদের উন্নয়নে বোর্ডও গঠিত হয়েছে। পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ও হয়েছে।’’
কেন্দ্রের দিকে বল ঠেললেও অস্বস্তিও রয়েছে তৃণমূল শিবিরে। কুড়মিদের আদিবাসীত্বের প্রমাণ স্বরূপ এখনও রাজ্যের তরফে কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংশোধিত রিপোর্ট (সিআরআই রিপোর্ট) কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। সেই সঙ্গে কুড়মিরা এ বার এমন কিছু দাবি জুড়েছেন, যেগুলির বিষয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে আদিবাসীদের জমি আদিবাসী ছাড়া অন্য কেউ কেনাবেচা করতে পারে না। কুড়মিরা এখন আদিবাসী নন। কিন্তু তাঁদের দাবি, ১৯০৮ সালের ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী তাঁদের জমিও যাতে অন্য কেউ কেনাবেচা করতে না পারে, সেই অধিকার দিতে হবে।
ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইনটি পরবর্তী কালে ২৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন হয় ১৯৯৬ সালে। এ বিষয়ে আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের রয়েছে। সেই সঙ্গে চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা কুড়মি সম্প্রদায়ের রঘুনাথ মাহাতোর যথাযথ মূল্যায়ের দাবিও করছেন কুড়মিরা। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে এখনকার ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় এলাকায় ইংরেজ পুলিশের গুলিতে নিহত হন রঘুনাথ।
কুড়মি সমন্বয় মঞ্চের নেতা অরূপ মাহাতো, রাজেশ মাহাতো, শিবাজি মাহাতোদের ক্ষোভ, ‘‘সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সিদো-কানহো, মুন্ডা সম্প্রদায়ের বিরসা মুন্ডা মর্যাদা পেয়েছেন। অথচ কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রথম শহিদ রঘুনাথ মাহাতো আজও উপেক্ষিত।’’ ঝাড়গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়টি রঘুনাথের নামাঙ্কিত করারও দাবি করেছে কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy