Advertisement
E-Paper

নির্দেশিকার পরোয়া নেই, বাধছে বিপত্তি

ছাই-দূষণের বাড় বাড়ন্তের জেরে ২০০০ সাল নাগাদ কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে ওঠে।

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।

সৌম্য প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ০৯:১৫
Share
Save

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ দূর করার লক্ষ্যে ২০০৩-২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ’ বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছিল। তার মধ্যে কিছু নির্দেশ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ মেনে চললেও অধিকাংশ নির্দেশিকাই এখনও কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। ফলে লাগাম টানা যায়নি দূষণ-সমস্যায়।

ছাই-দূষণের বাড় বাড়ন্তের জেরে ২০০০ সাল নাগাদ কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে ওঠে। তারা রাস্তা অবরোধ করে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেট অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। একাধিক বার পুলিশি হেনস্থা সত্ত্বেও সেই আন্দোলনকে বিশেষ দমিয়ে রাখা যায়নি। তারা অভিযোগ জানায় পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে। পরিদর্শনে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গাফিলতি ধরা পড়ায় ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয় তার বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। সেইসঙ্গে পর্ষদ বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়।

সেই নির্দেশিকা মেনে, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যেই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তার তিনটি চিমনিতে কয়েক কোটি টাকা খরচা করে ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিকেটার যন্ত্র বসায়। তাতে দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও বাকি নির্দেশিকা কার্যকর না হওয়ায় দূষণে রাশ টানা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। যেমন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ প্রতি বছর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র-সংলগ্ন খাল গুলি পরিষ্কার রাখতে বলেছিল। বিশেষ করে দেনান ও বাঁপুর খাল সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। চিমনি থেকে যাতে কোনওভাবেই ছাই বেরোতে না-পারে তার জন্য উন্নতমানের ছাঁকনি ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। যদি কোনও চিমনিতে ছাঁকনি লাগানো সম্ভব না হয়, তা হলে সেই চিমনি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

নির্দেশে বলা হয়েছিল, ছাই উত্তোলন করে যদি জাতীয় সড়কের ধারে জমি ভরাট করার জন্য ব্যবহার করা হয় তা হলে তা দ্রুত মাটি চাপা দিয়ে হাওয়ায় ওড়া বন্ধ করতে হবে। ট্রাকে ছাই পরিবহন করার সময় ভাল ভাবে ঢাকা চাপা দিতে হবে। পোড়ালে কম ছাই উৎপন্ন হয় এমন কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করতে হবে এবং কম দামি কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে। ছাই পরিবহণকারী গাড়ি গুলোর পেছনে সর্বদা জলের ঝারি ব্যবহার করতে হবে, ইত্যাদি। পর্ষদের বিশেষ আদালতের নির্দেশিকার পর কিছুদিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকলেও কিছু দিনের মধ্যেই নিয়ম লাটে উঠেছিল বলে অভিযোগ।

এলাকার পরিবেশ কর্মী তথা দূষণ প্রতিরোধ কমিটির মুখপাত্র নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘এলাকায় গ্রিন হাউস তৈরি করে ফুলের চাষ করলে ছাইয়ের দূষণে ফুল ক্ষতির মুখে পড়বে না। যে জমিগুলিতে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে ছাইমিশ্রিত জল ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলির আল যতটা সম্ভব উঁচু করা উচিৎ। জমিতে ছাইযুক্ত জল ঢোকার জায়গাগুলিতে বাঁধ বেঁধে দিতে হবে। বর্ষার আগে ছাই-পুকুরগুলির বাঁধ সুরক্ষিত রাখলে ছাই আর কৃষি জমিতে ঢুকতে পারবে না।’’

চক্ষু চিকিৎসক বিজ্ঞানকুমার বেরা জানান, দূষণ যেখানে বেশি সেখানের বাসিন্দাদের দিনে চোখে ছয়-আট বার জলের ঝাপটা দিতে হবে। রাস্তাঘাটে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। শ্বাসযন্ত্র ঠিক রাখতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের। তবে এ ব্যাপারে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার দীপঙ্কর দাশগুপ্তের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও কোনও ভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।
(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution Pollution control board

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}