খড়্গপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বাইরে দাঁড়িয়ে ট্রেন। নিজস্ব চিত্র
রেল অবরোধের ৮০ ঘন্টা অতিক্রান্ত। ১০০ ঘন্টার বেশি অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক। কাঠফাটা রোদেও কুড়মি আন্দোলনে বিরাম নেই। আন্দোলনস্থলে মিলছে না পানীয় জল। স্টেশন ডুবে আঁধারে। রাতে জাতীয় সড়কে ব্যারিকেড ভেঙে গাড়ি ঢুকে পড়ায় বাধছে অশান্তি। এতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুড়মিদের ক্ষোভ বাড়ছে। তারপরেও পিছু না হটে আজ, রবিবার থেকে জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা করেছেন কুড়মি নেতৃত্ব। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ তো বাড়ছেই শঙ্কিত শিল্পোদ্যোগীরাও। উৎপাদন থমকে যাওয়ার দশা শিল্পসংস্থাগুলিতে।
খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলে যে ক’টি বড় সংস্থা রয়েছে তারা পণ্য পরিবহণের জন্য মূলত রেলের উপর নির্ভরশীল। জাতীয় সড়কের ধারে এই শিল্পাঞ্চলের বহু কারখানার কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহণ হয় সড়কপথেও। তবে গত মঙ্গলবার থেকে কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কের খেমাশুলিতে টানা অবরোধ চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজ। আর সংলগ্ন খেমাশুলি স্টেশনে গত বুধবার থেকে রেল অবরোধ শুরু করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।
আটকে পড়েছে লরি, ট্রাক। ঘুরপথে চলছে ছোট গাড়ি। তবে রেল ঘুরপথে ট্রেন চালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার থেকে হাওড়া, শালিমার, সাঁতরাগাছি, খড়্গপুর থেকে টাটানগর, বিলাসপুর, নাগপুর, মুম্বই রুটে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। আজ, রবিবার ও কাল, সোমবারের জন্য সব মিলিয়ে ১১৭টি ট্রেন বাতিলের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যেই দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশেদ আলি কাদরী মানছেন, “আমাদের কাছেও শিল্প সংস্থাগুলি তাদের সমস্যা জানিয়েছে। আমরা কুড়মি সমাজের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়!”
আপাতত শিল্প সংস্থাগুলি মজুত কাঁচামাল দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। তবে মেটালিক্স কারখানায় কাঁচামাল ফুরিয়ে আসছে। উৎপাদিত পণ্য রফতানিও করা যাচ্ছে না। টাটা মেটালিক্সের এগজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ মিশ্র বলেন, “আমাদের কাঁচামাল জামশেদপুর থেকে রেলের মাধ্যমে আসে। উৎপাদিত পণ্য রেল ও জাতীয় সড়ক হয়ে পরিবহণ হয়। আপাতত যা মজুত কাঁচামাল আছে তা দিয়ে উৎপাদন চালাচ্ছি। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য যায় জামশেদপুর, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র। তা তো পাঠাতে পারছি না। এ ভাবে চললে তো উৎপাদন চালানো বিপজ্জনক হবে।”
মেটালিক্স কারখানা রয়েছে রশ্মি গোষ্ঠীরও। ওই সংস্থার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অভিজিৎ রায়ও বলেন, “ কুড়মি আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব আমাদের কারখানায় পড়েছে। কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য রফতানি একেবারে শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চললে উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় দেখছি না।”
কুড়মিরা অবশ্য অনড়।
তাঁদের নালিশ, প্রশাসন দাবি পূরণের বদলে আন্দোলন রুখতে পানীয় জল দিচ্ছে না। বন্ধ করে রাখা হচ্ছে স্টেশনের আলো। পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো বলেন, “প্রশাসন জল দিচ্ছে না। রাতে পুলিশ সরে যাওয়ায় ব্যারিকেড ভেঙে গাড়ি ঢুকে পড়ছে। এত মানুষ রাস্তায়। এতে তো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে এ ভাবে আমাদের ভাঙা যাবে না। আমরা আরও জায়গায় অবরোধ করব।”
আবার আদিবাসী কুড়মি সমাজের জেলা সভাপতি কমলেশ মাহাতোর হুঁশিয়ারি, “রবিবার থেকে কোটশিলায় অবরোধ হবে। এর পরে মা-বোনেরা বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ঘিরবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy