পরিবারটির জমির দলিলও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে গণৎকারের কাছে নিয়ে গিয়ে দোকানে আগুন লাগানোর ঘটনায় ‘দোষী সাব্যস্ত’ করা হয়। তার পর সালিশি সভা ডেকে এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার নিদান দেওয়া হয় ‘দোষী’র পরিবারকে। শুধু তাই নয়, জোরজবরদস্তি ওই পরিবারের জমির দলিলও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েক জন ‘মাতব্বর’-এর বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চাকিরহাটে ঘটনাটি ঘটেছে। পড়শিরা জানান, ‘মাতব্বর’দের রোষে পড়া ওই পরিবার এখন আতঙ্কে ঘরছাড়া। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৩০ জুলাই এলাকায় একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ চাকিরহাটে একটি দোকানে আগুন লাগে। সেই ঘটনায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় ওই দোকানের মালিক কাশীনাথ চাকীর। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করেছে ঠিকই। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। যদিও কাশীনাথের দাবি ছিল, তাঁর মতোই ডেকরেটর্সের ব্যবসায় যুক্ত ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তারকনাথ আড়িই তাঁর দোকানে আগুন লাগিয়েছেন। সেই সময় এ নিয়ে অবশ্য বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। তবে অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর ৬ অগস্ট নানা অজুহাত দেখিয়ে তারকনাথকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায় সুকুমার মাইতি নামে এক গণৎকারের কাছে যান কাশীনাথ। সেখানে গণৎকারও দাবি করেন, তারকনাথ ও তাঁর ছেলেই কাশীনাথের দোকানে আগুন লাগানোর ঘটনায় যুক্ত। ফিরে এসে গ্রামবাসীদেরও সে কথা জানান কাশীনাথ। তার পর থেকেই তারকনাথ ও তাঁর পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে চাপ দেওয়া শুরু হয়।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, গণৎকারের কাছ থেকে ফেরার পরেই সন্ধ্যায় তারকনাথ, তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রী দীপালির উপর প্রকাশ্যে টাকা চেয়ে জুলুম শুরু হয়। তাঁদের মারধরও করা হয়। দীপালি সদ্যই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। নবজাতকের বয়স ন’মাস। আরও অভিযোগ, তারকনাথ ও তাঁর পরিবারকে সালিশি সভায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গ্রামবাসীদের সামনে তারকনাথকে দিয়ে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করানো হয়। সাদা কাগজে তা লিখিয়ে সইও করিয়ে সাত দিনের মধ্যে এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় তারকনাথকে। তাঁর জমিজমার দলিলও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুষ্পেন্দু আড়ি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ডেকরেটর্সের গোডাউনে আগুন লাগার ঘটনায় ওঁদের (তারকনাথ ও তাঁর পরিবারকে) জোর করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা করা হয়। সাত দিনের মধ্যে এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়।’’
তারকনাথের পরিবারের দাবি, পুলিশের কাছে মুখ না খোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল তাদের। তা সত্ত্বেও সালিশি সভার পর দাসপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তার পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। দাসপুর থানা সহযোগিতা না করায় শেষমেশ ৯ অগস্ট ঘাটালের এসডিপিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তারা।
আর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কাশীনাথের পক্ষ থেকেও। তাঁর বক্তব্য, সালিশি সভায় তারকনাথ নিজেই দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কেউ বাধ্য করেনি। তাঁর কথায়, ‘‘সালিশি সভায় নিজেরাই দোষ স্বীকার করেছিল। পুলিশের উপস্থিতিতেই সালিশি সভা থেকে বাড়ি ফিরেছিল ওরা (তারকনাথ ও তাঁর পরিবার)।’’ রামপদ সামন্ত নামে এক গ্রামবাসীও বলেন, ‘‘কোনও মারধর করা হয়নি। জরিমানাও করা হয়নি। ওরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছেন। ওদের কেউ ভয় দেখাননি। মিথ্যে অভিযোগ করছে। পুলিশই ওদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছিল। তখন ওরা বলেছিল, ওদের উপর কোনও অত্যাচার বা জরিমানা করা হয়নি। এখন মিথ্যে কথা বলছে।’’
ঘাটালের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, ‘‘দাসপুরের ঘটনায় দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। দু’টি পৃথক মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সালিশি সভা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে খবর পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy