Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জেদের জোরেই জিততে চান ‘বাংলার মুখ’ তিন কন্যাশ্রী

পূর্ব মেদিনীপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিভাবান কন্যাশ্ৰীদের তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। নানা ক্ষেত্রের একজন করে বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলার এই তিন কৃতী ছাত্রী সেই সুযোগ পেয়েছে।’’

লড়াকু: বাঁদিক থেকে সৌগতা জানা, মুসকান খাতুন ও প্রিয়াঙ্কা জানা। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: বাঁদিক থেকে সৌগতা জানা, মুসকান খাতুন ও প্রিয়াঙ্কা জানা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি ও এগরা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

একজনের বাবা ফেরিওয়ালা। এক জনের বাবা ফুটপাতে চাউমিন বিক্রি করেন। আর একজনের বাবার রোজগার সামান্য। তিনটি পরিবারকেই এক সূত্রে বেঁধে ফেলেছে দারিদ্র। তবে সেই প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি তিন পরিবারেরই তিন কন্যার লড়াইকে। দারিদ্রের ভ্রূকুটিকে তুচ্ছ করে তিনজনেই ছুঁয়েছে সাফল্যের শিখর। নিজেদের প্রতিভার জোরে পূর্ব মেদিনীপুর ওই তিনকন্যাই আজ কন্যাশ্ৰী প্রকল্পে ‘বাংলার মুখ’।

অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে তার কাছে অনেক কিছুই হার মানে, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তিন ছাত্রী। আর তাই রাজ্যের কন্যাশ্ৰী প্রকল্পে সেরা ১৪ জনের অন্যতম রোল মডেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে তারা।

কাঁথির চন্দ্রামণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সৌগতা জানা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তার ঝুলিতে এখন বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। মনোহরচকের বাসিন্দা সৌগতা ২০১৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে আন্তর্জাতিক যোগাসন প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব সতেরো বালিকা বিভাগে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ জেতে। এরপর ২০১৪য় লন্ডনে আন্তর্জাতিক যোগা স্পোর্টস ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে বিশ্ব যোগাসনে অনূর্ধ্ব ১৭ বালিকা বিভাগে ভারতের হয়ে সোনা যেতে সৌগতা। চলতি বছরে নেপালের কাঠমান্ডুতে ১১ তম এশিয়া কাপ যোগা প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কাঁথির এই মেয়ে।

সৌগতার বাবা পান্থরঞ্জন জানা তেমন কিছু করেন না। মা কবিতা জানার কাঁধেই সংসারের জোয়াল। কাঁথির একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলের শিক্ষিকা তিনি। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার। জানালেন লস অ্যাঞ্জেলেসে যাওয়ার জন্য প্লেন ভাড়া ছিল না। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মেয়ের সফর। শেষে কাঁথির বহু প্রতিষ্ঠান ও সুহৃদয় কয়েকজন এগিয়ে আসায় তা সম্ভব হয়।

কাঁথিরই দুলালপুর ক্ষীরোদচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মুসকান খাতুন। বাবা খালেক শা লোহা-লক্কড় ফেরি করেন। মা রোজা বিবি গৃহবধূ। ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে দিন কাটে মুসকানের। দুবেলা পেট ভরে খেতে না পাওয়ার জ্বালা সে ভুলে থাকে খেলার প্রতি অদম্য টানে। প্রতি বছর স্কুলে নানা খেলায় পুরস্কার তার বাঁধা। শর্ট পার্টে ছাত্রীর প্রতিভা দেখে অবাক জেলার ক্রীড়া কর্তারাও। দুবেলা যে মেয়েটা পেটপুরে খেতে পায় না, তার হাত এত দূরে লোহার বলটা ছোড়ার শক্তি পায় কোথায়!

এগরার পানিপারুল মুক্তেশ্বর হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা জানা। জাতীয় শ্যুটিংয়ে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছে সে। বাবা শম্ভু জানার পানিপারুল মোড়ে ফুটপাতে রোল ও চাউমিনের দোকান। দোকানের সামান্য আয় থেকেই মেয়ের কোচিংয়ের ব্যবস্থা রেছেন। মেয়ের সাফল্য দেখে ধার করে ৬৭ হাজার টাকা দিয়ে পোশাক কিনে দিয়েছেন। শম্ভুবাবুর কথায়, ‘‘৫ লক্ষ টাকার রাইফেল কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। সরকারের কাছে আবেদন, যদি সাহায্য পায় তা হলে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।’’

সৌগতা, মুসকান আর প্রিয়াঙ্কা—তিন কন্যাশ্রীর এই লড়াইকেই রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরে সমাজের সব শ্রেণির মেয়েদের কাছে রাজ্য প্রশাসন বার্তা দিতে চায়, দারিদ্রতা কোনও বাধা নয়, দরকার অদম্য ইচ্ছা। রাজ্যের এমন ১৪ জন কন্যাশ্ৰী প্রাপককে বেছে তাদের ছবি ও কাহিনী নিয়ে বই প্রকাশিত হবে। রাজ্য জুড়ে দেওয়া হবে ফ্লেক্স, পোষ্টার।

পূর্ব মেদিনীপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিভাবান কন্যাশ্ৰীদের তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। নানা ক্ষেত্রের একজন করে বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলার এই তিন কৃতী ছাত্রী সেই সুযোগ পেয়েছে।’’

শুধু বিজ্ঞাপনের রোল মডেল হিসাবে নয়, তিন কন্যাই চায় ভবিষ্যতে সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে। আর অবশ্যই ফেরাতে চায় সংসারের হাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyshree Scheme girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy