সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। অনেক স্কুল ধুঁকছে শিক্ষকের অভাবে। এই আবহেও কোন্দল আটকাতে পারল না তৃণমূল শিক্ষক সমিতি। বস্ত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে সামনে এল সেই দ্বন্দ্ব।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে স্টেডিয়াম সংলগ্ন তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ে বস্ত্র বতরণ কর্মসূচি ছিল। সেখানে ব্যানারে লেখা ছিল পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। ছিলেন সাংসদ কালীপদ সরেন, জেলা তৃণমলের চেয়ারম্যান বিরবাহ সরেন টুডু, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো। যদিও এই অনুষ্ঠানের জন্য ওই শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি অজিত নায়েক বা রাজ্য কমিটির সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। নেওয়া হয়নি অনুমোদনও। অভিযোগ এমনই।
ওই ঘটনায় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার ও জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর কাছে নালিশ জানিয়েছেন অজিত নায়েক। অজিত বলছেন, ‘‘কোনও আলোচনা না করেই সংগঠনের নামে বস্ত্র বিতরণ করেছেন দু-একজন বর্তমান ও কিছু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। জেলা ও রাজ্য কোথাও অনুমোদন নেয়নি। রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েছি।’’
জানা গিয়েছে, ওই বস্ত্র বিতরণের জন্য ছাপানো কার্ডে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নাম লেখা ছিল। আর কিছুর উল্লেখ ছিল না। ওই কর্মসূচিতে ছিলেন শিক্ষক তপন পাত্র। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘দলের নির্দেশ অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ দিবসে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সভাপতির কাছে ঠিকমত খবর পৌঁছাচ্ছে না। উনি (সংগঠনের রাজ্য সভাপতি) পুরনো সদস্যদের গুরুত্বও দিচ্ছেন না।’’ যা শুনে অজিত নায়েক বলছেন, ‘‘কার্ড ছাপানোর আগে আমার সঙ্গে অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। শুধুমাত্র নিয়মমাফিক বাড়িতে কার্ড দিয়েছে। আমার সঙ্গে কথাও হয়নি।’’
আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন এই জেলার অনেক স্কুলের শিক্ষক। এই সময়েও শিক্ষক সংগঠনের গোষ্ঠীকোন্দল পিছু ছাড়ছে না। যা নিয়ে অস্বস্তি ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কেন এই পরিস্থিতি? দলের অন্দরের খবর, তপন ও হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ওই সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের ‘ঠান্ডা লড়াই’ দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি সেই লড়াই আরও বেড়েছে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘বোঝাপড়া, আলোচনার ভিত্তিতে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। যে যার মতো করলে তো হবে না। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’’ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি ও রাজ্য কমিটির সদস্য যারা রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনও রকম কোনও অনুষ্ঠান করা একেবারেই অবৈধ। এর দায় পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি নেবে না। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)