কুড়মি আন্দোলনের জেরে ফাঁকা খড়্গপুর রেল স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
৩৬ ঘন্টা অতিক্রান্ত। খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে কুড়মি অবরোধের জেরে পশ্চিম ভারতগামী সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ। ট্রেনযাত্রার মাঝপথে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন দূরের রেলযাত্রীরা। লোকসান বাড়ছে রেলেরও। তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় কুড়মিরা। রাজ্য প্রশাসনের কাছে নতি স্বীকারে নারাজ তাঁরা। উল্টে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে কুড়মি সমাজ। বৃহস্পতিবার খেমাশুলিতে আন্দোলনের মঞ্চে আসেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো।
‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে বুধবার থেকে খেমাশুলিতে শুরু হয়েছে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ। মঙ্গলবার থেকে খেমাশুলিতে ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করছে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)ও। কর্মসূচির গোড়া থেকেই খেমাশুলিতে রয়েছেন কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো। পৃথকভাবে আন্দোলন শুরু হলেও দাবি একই— তফসিলি উপজাতি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতি। এই দাবিতেই গত সেপ্টেম্বরে টানা ৬ দিন এই খেমাশুলিতেই চলেছিল জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ। এ বারের অবরোধে সরাসরি মহারাষ্ট-পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জট কাটাতে বুধবার খেমাশুলির অদূরে কলাইকুন্ডায় কুড়মি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। তবে রফাসূত্র বেরোয়নি। পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা চলছে।’’
বুধবার রাতে গোলমালও হয়। কুড়মিদের আন্দোলন মঞ্চের কাছে একটি পুলিশের গাড়ি যেতেই উত্তেজনা ছড়ায়। পাথর ঝুড়ে ভাঙা হয় গাড়ির কাচ।কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গর রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো বলেন, “আমার চাকরি নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, যে রিপোর্ট রাজ্যের তরফে কেন্দ্রে পাঠানোর কথা তা না গেলে আন্দোলন তোলা হবে না। আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়বে। জঙ্গলমহল স্তব্ধ করে দেব।” আর আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য মানতা অজিতপ্রসাদ বলছেন, “মানুষের এই ভোগান্তির দায় রাজ্য ও কেন্দ্রের। আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। ঘুরপথে ট্রেন চলাচল ও সড়কে যান চলাচল রুখতে যা করনীয় তা হবে। খেমাশুলিতে এই বার্তাই দিতে এসেছি।” এক ধাপ এগিয়ে এ দিন নন্দীগ্রামে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আবার দাবি, ‘‘এর জন্যও দায়ী মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের আগে কুড়মিদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন অন্য জনজাতিদের চাপে উনি পিছু হটছেন। রাজ্যের অশান্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী।’’
স্বভাবতই পাকে পড়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা। গতবার পাঁচ দিনের কুড়মি আন্দোলনে রেলের ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল। এ বার এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি। আগে থেকেই রাজধানী, দুরন্ত, জনশতাব্দী, আজাদহিন্দ, গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস-সহ ৮৪টি ট্রেন এ দিন বাতিল করা হয়। ফলে স্থানীয় যাত্রীরা সে ভাবে স্টেশনে আসেননি। তবে দূর-দূরান্তের যাত্রীরা খড়্গপুরে পৌঁছে বিপাকে পড়েন। স্ত্রী সুমন ও দুই পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে আসা সেনা আধিকারিক সুরেন্দ্র পান্ডে বলছিলেন, “চাকরিসূত্রে হায়দরাবাদে থাকি। টাটানগরে বাড়ি যাচ্ছিলাম। খড়্গপুর থেকে ট্রেন পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে খুব বিপদে পড়লাম।” জামশেদপুরের ট্রাক চালক সাধু ভকত বলেন, “জলপাইগুড়িতে ট্রাক পৌঁছে দিয়ে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলাম। বুধবার দুপুরে খড়্গপুর পর্যন্ত এসে আর ট্রেন পাইনি। স্টেশনেই পড়ে রয়েছি।”
আজ, শুক্রবারও গীতাঞ্জলি, দুরন্ত, আজাদ হিন্দ-সহ ৫৯টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার অবশ্য বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রাজ্যের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। এটাই যাত্রীদের বুঝাচ্ছি। এর পরে কুড়মিরা আরও জায়গায় অবরোধ করবে শুনছি। সেটা হলে রেল পুরো স্তব্ধ হয়ে যাবে। লোকসান বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy