রামনগরে সভায় ফুলের মালায় বরণ নড্ডাকে। মঞ্চে স্মৃতি ইরানি, সুকান্ত মজুমদার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ঝরঝরে বাংলা। অনভ্যস্ত বাংলা। হোঁচট খাওয়া বাংলা। উপকূল এলাকায় গেরুয়া দলের নোঙর হল অনভ্যস্ত বাংলা।
রবিবার রামনগরে দলীয় জনসভার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। এ ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় সভা। শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে সুকান্ত সভার হাল ধরবেন, এটাই প্রত্যাশা করেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সে ভূমিকা পালন করছেন স্মৃতি। রাজ্য ও কেন্দ্র নেতৃত্বের মধ্যে যেন যোগসূত্র হিসেবে কাজ করলেন তিনি।
বাগ্মী না হলেও সুকান্ত বক্তৃতায় হোঁচট খান না। এ দিন পাতা দেখে বেশ কিছুক্ষণ (হোঁচট খেতে খেতে) বাংলায় বলতে শোনা গিয়েছে নড্ডাকেও। তবে সবচেয়ে সাবলীল ভাবে সভাকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন স্মৃতিই। অন্যভস্ত বাংলায় তিনি বলেছেন, ‘‘আজ গর্জিত হব। গর্বিত হব জনসংকল্প নেওয়ার জন্য। রামনগরের পূণ্যভূমিতে স্বাগত জানাই অখিল ভারতীয় সভাপতিকে। রাম রাজ্যের স্বপ্ন এবং সংকল্প জানানোর জন্য নড্ডাজী এখানে এসেছেন।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘নডডাজীকে জানাতে চাই, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের এক একজন কর্মী খুব গর্বিত হয়েছেন। তাঁরা আনন্দিত হয়েছেন। রামনগরের পূর্ণভূমিতে আমরা সবাই স্বাগত জানাই জে পি নড্ডাকে। আপনাকে নিবেদন জানাই।’’
স্মৃতির মা বাঙালি। বাংলার সঙ্গে স্মৃতির যোগ তাই নাড়ির। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটকে লক্ষ্য রেথে যে সব কেন্দ্রে এ পর্যন্ত বিজেপি জিততে পারেনি এ বার সেই সব লোকসভা কেন্দ্রগুলিকে পাখির চোখ করে লড়াইয়ের জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কর্মসূচিতে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। ইতিপুর্বে তিনি কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে দু’বার ঘুরে গিয়েছেন স্মৃতি। করেছেন জনসংযোগ। এ দিনও মমতাকে আক্রমণের ক্ষেত্রেও স্মৃতি ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যার নেই ক্ষমতা, তার নাম মমতা। মনের ভাবনা নেই ভাইপো আর দিদির। যদি মনের ভাবনা থাকতো তবে এ রাজ্যে মেয়েদের ধর্ষিত হতে হত না। আবাস যোজনায় টাকা লুট হত না। কাটমানি নিতেন না।’’
সুকান্তের এই আপাত নিষ্ক্রিয়তাকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, এর নেপথ্যে রয়েছে সুকান্ত-শুভেন্দু বিরোধ। তবে সশরীরে না থাকলেও সর্বভারতীয় সভাপতির কর্মসূচিতে শুভেন্দুর উপস্থিতি টের পাওয়া গেল সুকান্তের বক্তৃতার সময়েই। সমবেত জনতা চিৎকার করে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পিতৃপরিচয় সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতির কাছে জানতে চাইল। সে সময় সুকান্তে বলতে শোনা যায় , ‘‘বাবার (অভিষেকের) নাম জানা নেই। বলতে পারব না। এগুলো আমাদের রুচিতে বাঁধে। ওদের দলের নেতারাই বলে দিতে পারবেন। এখন একজন আইএসএফ বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে তারপর ফুরফুরা শরীফের হাকিম সাহেবরা বলে দিচ্ছেন কার কী বাবার নাম। এখন মনে হচ্ছে ডিএনএ দেখাতে হবে।’’ প্রসঙ্গত সম্প্রতি একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ তুলেছিলেন অভিষেক ও শুভেন্দু।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখে সে ভোট নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে সভা পরিচালনায় দায়িত্ব নিতে দেখা না গেলেও স্থানীয় রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে সভাস্থলে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়িয়েছেন সুকান্তই। এ দিন মন্ত্রীপুত্র তথা যুব তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরিকে, আক্রমণ করে সুকান্ত বলেন, ‘‘কী অখিল দা (মন্ত্রী অখিল গিরি)? ছেলে নাকি ভালই মাল কামাচ্ছে কলেজে ভর্তি করে। চিরকুটে লিখে নাম পাঠিয়ে দিচ্ছে। এত লুকোচুরি কেন? বাড়ির সামনে বড় করে পোস্টার টাঙান। অংক অনার্সে ৩০ হাজার টাকা, ভূগোল অনার্সে ৫০০০০ টাকা আর কেমিস্ট্রি অনার্সের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা।।’’ যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই আক্রমণ প্রসঙ্গে পাল্টা সুপ্রকাশ বলেছেন, ‘‘বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন।’’ এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতির উত্তম বারিককেও আক্রমণ করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘দাদা সিন্ডিকেট সাবধানে চালান। দুয়ারে সরকারের মতো দুয়ারে সিবিআই, ইডি আসবে। বুঝতে পারবেন না। তখন কেষ্টদার (অনুব্রত মণ্ডল) মতো বেলুন চুপসে যাবে।’’ এ প্রসঙ্গেও সভাধিপতি উত্তমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজনীতির অভিজ্ঞতায় আমার তুলনায় বহুগুণ পিছিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এখন পর্যন্ত তিনি রাজনীতিতে প্রাপ্তবয়স্ক নন। আমার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলা হয়েছে তথ্য প্রমাণ সহ তুলে ধরতে পারলে আমি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy