শুক্রবার কাঁথির পথসভায় শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র।
নিজের ‘খাসতালুক’ কাঁথিতে বিজেপির কর্মসূচিতে হাজির রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অথচ সেখানে নেই জেলার বিজেপি বিধায়কেরাই!
শুক্রবার বিকেলে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির ডাকে পেট্রপণ্যের মূল্য হ্রাসে রাজ্য সরকার কেন পদক্ষেপ করছে না, এই প্রশ্ন তুলে পদযাত্রা এবং পথসভা হয়েছে। সেখানে শুভেন্দুর সঙ্গে জেলার বিজেপি নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। তবে উত্তর ও দক্ষিণ কাঁথি, খেজুরি এবং ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়কেরা এই কমর্সূচিতে ছিলেন না। এলাকার চার-চারজন দলীয় বিধায়কের একজনও শুভেন্দুর কর্মসূচিতে না থাকায় জেলায় জল্পনা শুরু হয়েছে। গরহাজির বিধায়কদের কারও কারও দাবি, তাঁরা বিধানসভায় গিয়েছিলেন। তবে এ দিন বিধানসভার অধিবেশনে বিজেপির কেউ ছিলেন না বলেই খবর।
শুভেন্দু নিজে এ দিন সকালে কলকাতা থেকেই কাঁথি গিয়েছেন। দলীয় কর্মসূচিতে বড় ডাকঘরের সামনে একটি পথসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বক্তৃতা করেন। তাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-সহ একাধিক থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘এঁরা তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় কাজ করছেন। কিন্তু এ সমস্ত কিছু করে কোনও লাভ হবে না। কাঁথি থেকে হলদিয়া পর্যন্ত আমার যাতায়াতের রাস্তায় উত্তর কাঁথি, খেজুরি, ভগবানপুর, নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়া সব আসনে মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।’’
বিজেপির এ দিনের এই কর্মসূচিতে শুভেন্দু ছাড়াও ছিলেন জেলা বিজেপি সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী, রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ রায় প্রমুখ। কিন্তু দলের সাংগঠনিক জেলার কোনও বিধায়ককেই এ দিন দেখা যায়নি। এবার বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি আসনের মধ্যে সাতটিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি প্রার্থীরা। তার মধ্যে শুধু কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় চার জন বিধায়ক রয়েছেন। সেখানেই উত্তর ও দক্ষিণ কাঁথি, ভগবানপুর এবং খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কেরা কর্মসূচিতে না থাকায় প্রশ্ন উঠেছে।
পুজোর সময় বিধানসভার অধিবেশন হচ্ছে এবার। গোটা অধিবেশন পর্বই বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি বিধায়কেরা। শুধুমাত্র প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় তাঁরা অংশ নিয়েছেন। যদিও এ দিন কাঁথির কর্মসূচিতে গরহাজির বিধায়কদের একাংশের দাবি, তাঁরা বিধানসভায় অধিবেশনে ছিলেন। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক অরূপ দাসের দাবি, ‘‘আমি, ভগবানপুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি এবং খেজুরির বিধায়ক তিনজনই বিধানসভায় ছিলাম। তাই কাঁথিতে কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি।’’ আবার খেজুরির বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিকের ব্যাখ্যা, ‘‘এদিন নরঘাটে বাস দুর্ঘটনায় আমার এলাকার কয়েকজন মারা গিয়েছেন। সে সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে তমলুকে সামান্য দেরি হয়ে গিয়েছিল। তারপর কলকাতায় ব্যক্তিগত কিছু কাজে চলে গিয়েছিলাম।’’ উত্তর কাঁথির বিধায়ক সুমিতা সিংহ বলেন, ‘‘এক আত্মীয় অসুস্থ। তাই বাইরে রয়েছি।’’
বিধানসভায় হাজিরা নিয়ে যে বিধায়কেরা মিথ্যা কথা বলছেন, তা দাবি করছেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি ও এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বিধায়কদের কেউই বিধানসভায় ছিলেন না। কয়েকদিন ধরে তো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বিজেপির একটা অংশ দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে। জেলার কোনও বিজেপি বিধায়ক এ দিন বিধানসভায় ছিলেন না। আসলে তারা শুধু বিরোধী দলনেতা নয়, গোটা বিজেপি দলটির সঙ্গে প্রকারান্তরে দূরত্ব তৈরি করছেন। পরবর্তীকালে তাঁরাও তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।’’
শাসক দলের এই দাবিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওরা মূর্খের দল। বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে আমরা অত্যাচারিত বিজেপির লোকেরা সংগঠিত হচ্ছি। সব বিধায়ক ঐক্যবদ্ধ। আসলে তাঁরা বিধানসভায় কাজে ব্যস্ত।’’
এমন আবহে আজ, শনিবার শুভেন্দু ভগবানপুরে যাচ্ছেন। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন ভগবানপুরে শেষবার সমবায় সম্মেলনে হাজির ছিলেন তিনি। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ ও বিধানসভার ভোটের পর ফের ভগবানপুরে আসছেন দলীয় নেতা খুনের প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হতে। সেই সফরে উৎসাহিত ভগবানপুরে কোণঠাসা বিজেপি শিবির। ভগবানপুর থেকে বিজেপির বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন এবারের ভোটে। তবে শাসকের চাপের মুখে বিজেপি বিধায়ক ও কর্মী সমর্থকদের সেভাবে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। ফলে বিজেপির কাঁথির কর্মসূচিতে বিধায়কদের গরহাজিরার মতো শনিবার ভগবানপুরেও তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, তা দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy