স্থানীয় গাছতলায় অন্য মূর্তিগুলির সঙ্গেই রয়েছে সদ্য উদ্ধার হওয়া দেবী মূর্তিটি (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের কাজে পুকুর খননের সময় পাওয়া গেল পাথরের এক দেবী মূর্তি। ঘটনাস্থল দাঁতনের মনোহরপুর। মূর্তিটি ভগ্নপ্রায়, মুখও ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটি পার্বতীর মূর্তি। তবে রবিবার উদ্ধারের পরে মূর্তিটি সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা এখনও হয়নি। গাছতলাতেই অন্য কিছু মূর্তির সঙ্গে ঠাঁই হয়েছে তার।
দাঁতনের মনোহরপুর পঞ্চায়েতের কাকরাজিত এলাকার কুণ্ডপুকুরে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ চলছিল। রবিবার সকালে শ্রমিকদের কোদালে লাগে ঠোক্কর খায় পাথরের একটি মূর্তিটি। তারপর স্থানীয় লোকজনই সেটিকে তুলে আনেন। মূর্তিটি উদ্ধারের পরে এর প্রাচীনত্ব চর্চা শুরু হয়েছে। দাঁতনের মোগলমারিতে বৌদ্ধ প্রত্নস্থল আবিষ্কার হয়েছে। তবে এই মূর্তি বৌদ্ধ পরম্পরার নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা স্বাতী রায় মূর্তিটির ছবি দেখে বলেন, ‘‘পার্বতী বলেই মনে হচ্ছে। ভেঙে গিয়েছে বলে হাতে কী ধরা রয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। সম্ভবত ক্লোরাইট পাথরের ছোটনাগপুর ঘরানার এই মূর্তি নবম শতকের।’’ ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগের কলকাতা মণ্ডলের অধীক্ষক শুভ মজুমদারও বলছেন, ‘‘এটি দেখে পার্বতী মূর্তি বলেই মনে হচ্ছে। সম্ভবত চারটি হাত ছিল। ছবির পিছনের স্ল্যাবটি স্তম্ভ-সহ ক্ষুদ্রাকৃতির মন্দিরের খিলান দিয়ে সজ্জিত। ব্যাকস্ল্যাবের কেন্দ্রের শীর্ষে একটি কীর্তিমুখ চিত্রিত করা হয়েছে। চিত্রটি আঞ্চলিক শিল্প শৈলীকে প্রতিফলিত করছে। এটি দশম-একাদশ শতাব্দীর হতে পারে।’’
গবেষক ললিতমোহন সামন্ত তাঁর ‘দাঁতনের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ওড়িশার কেশরী বংশের সামন্ত রাজা ছিলেন কর্ণকেশরী। তিনি দণ্ডভুক্তি প্রদেশের শাসনকর্তা হন। সেই সময় বাংলায় পাল বংশের রাজা রাম পালের এক সামন্ত রাজা জয়সিংহের সঙ্গে কর্ণকেশরীর যুদ্ধ হয় ১০৭৭ সালে। যুদ্ধে জয়লাভ করেন জয়সিংহ। অনুমান, পাল আমলের শেষের বা সেন বংশের শুরুর দিকের এই মূর্তি। মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় দেড় ফুট ও চওড়া এক ফুট। দাঁতনের স্থানীয় ইতিহাসের গবেষক অতনুনন্দন মাইতি, সূর্য নন্দীদের মতে, ‘‘সালঙ্কারা এই দেবী প্রতিমা পাল পরবর্তী যুগের বলে মনে হচ্ছে।’’
কাকরাজিত এলাকায় থাকা কুণ্ডপুকুরে আগেও মূর্তি মিলেছে। প্রথম ১৯৭৪ সালে খননে উঠে এসেছিল পাল আমলের বেশ কয়েকটি মূর্তি। ১৯৮১-৮২ সাল নাগাদ ফের খনন হয়। তখন বিষ্ণু ছাড়াও সূর্যপুত্র রেবন্ত, আমলক, সিংহের মূর্তি-সহ একাধিক মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ভাঙাচোরা নয় এমন দুটি মূর্তি স্থানীয় মন্দিরের ভিতরে থাকলেও ভগ্নপ্রায় মূর্তিগুলি এলাকায় গাছতলার নীচেই পড়ে আছে অবহেলায়। এ বার পাওয়া দেবী মূর্তিও আপাতত সেখানেই রয়েছে। কাকরাজিত মন্দিরের পুরোহিত বামাপদ মিশ্র বলেন, ‘‘পুকুর খননের সময় পাওয়া মূর্তিটি গাছের তলায় অন্য মূর্তির সাথে রাখা হয়েছে।’’
এগুলোর কি সংরক্ষণ হবে না? দাঁতন ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘সব মূর্তিকে এক জায়গায় করে সুরক্ষিতভাবে রাখার চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে এলাবাসীর ধর্মীয় আবেগও জড়িয়ে আছে। যে সব মূর্তি সরানো সম্ভব সেগুলি সংরক্ষণের বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র আর্কিয়োলজিস্ট প্রকাশচন্দ্র মাইতির আক্ষেপ, ‘‘এই মূর্তিগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। তবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময় এলাকাবাসীর থেকে কিছু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তাই পিছিয়ে আসতে হয় আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy