Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Freedom Fighter

Freedom fighter: বিস্মৃত ভূমিপুত্র বিপ্লবী

ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র ভূপতিভূষণের নামের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের অনেকেই পরিচিত নন।

ভূপতিভূষণ মণ্ডল।

ভূপতিভূষণ মণ্ডল।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:১৮
Share: Save:

জেলার সাম্প্রতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ‘রাষ্ট্র বিরোধী’ সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনের ধাত্রীভূমি হিসেবেই জনমানসে পরিচয় ঝাড়গ্রাম জেলার। স্বাধীনতার আগে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রেও এই জেলার যোগ ছিল নিবিড়। ঝাড়গ্রামেরই ভূমিপুত্র ভূপতিভূষণ মণ্ডল যেমন জড়িয়ে ছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে। প্রথম জীবনে তিনি জড়িয়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে। পরাধীন ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দীর্ঘ সময় কারাবন্দি ছিলেন। শেষ জীবনে অবশ্য গাঁধীর অহিংস আদর্শকে আঁকড়ে ধরে এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাস্তাঘাট।

অগ্নিযুগের বিপ্লবী সেই ভূপতিভূষণ মণ্ডলের স্মৃতি সংরক্ষণ হয়নি আজও। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র ভূপতিভূষণের নামের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের অনেকেই পরিচিত নন। তাঁর কোনও মূর্তিও স্থাপন হয়নি এলাকায়। ভূপতিবাবুর জন্ম ১৯০৬ সালে, ঝাড়গ্রামের চুবকা অঞ্চলের রাউতারাপুর গ্রামের সম্পন্ন চাষি পরিবারে। ওই সময় এলাকায় কোনও স্কুল ছিল না। তাই পড়াশোনার জন্য তাঁকে পাঠানো হয় মেদিনীপুরে মামার বাড়িতে। মেদিনীপুরে টাউন স্কুলে পড়ার সময়ই অনুশীলন পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন পতিভূষণ। দশম শ্রেণির পরে যোগ দেন বিপ্লবী দলে। মেদিনীপুরে পর পর তিনজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট পেডি, ডগলাস ও বার্জকে গুলি করে খুন করেন বিপ্লবীরা। ভূপতিভূষণের খুড়তুতো ভাই ৯৩ বছরের অনিল মণ্ডল জানান, ওই তিনটি হত্যাকাণ্ডে আড়ালে থেকে যে সব বিপ্লবী দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন ভূপতিভূষণ।

১৯৩৩ সালে বার্জ খুনের ঘটনার ভূপতিভূষণের নাম জড়ালেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে ১৯৩৪ সালে গ্রেফতার হন ভূপতিভূষণ। ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান। কিন্তু গ্রামে ফেরেননি। অনিল বলেন, ‘‘দাদা শপথ নিয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই গ্রামে ফিরবেন। ফিরেওছিলেন ১৯৪৯ সালে।” সেই সময়ে চুবকা অঞ্চলের খালশিউলি এলাকাটি কিছুটা জনবহুল ছিল। ভূপতিভূষণের উদ্যোগে গঠিত হল খালশিউলি পল্লি উন্নয়ন সমিতি। স্থাপিত হয় খালশিউলি উচ্চতর বিদ্যালয়। স্থানীয় সমাজসেবী শম্ভুনাথ সেনের দান করা জমিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে ভূপতিভূষণের হস্তক্ষেপে সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য সিলমোহর দিতে বাধ্য হয় সরকার।

স্থানীয় প্রবীণরা জানাচ্ছেন— এলাকায় রাস্তাঘাট তৈরি, বিদ্যুৎ সংযোগ আনা, সাংস্কৃতির দল গঠন করে যাত্রা মঞ্চস্থ করা সবই হয়েছিল ভূপতিভূষণের উদ্যোগে। ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রয়াত হন তিনি। রাউতারাপুর গ্রামে ভূপতিভূষণের বাড়িটির এখন বেহাল অবস্থা। ভূপতিভূষণের সম্পর্কিত নাতি দিলীপকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভূপতিদাদু শেষ জীবন পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পেয়েছেন।’’ ভূপতিভূষণের সম্পর্কিত প্রপ্রৌত্র যাদব মণ্ডল বলেন, ‘‘বেহাল বাড়িটিতে এখন কেউ থাকেন না। নিজেদের উদ্যোগে আমরা মূর্তি স্থাপনের চেষ্টা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Freedom Fighter Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy