ফাইল চিত্র।
নিজের নামে জমির মিউটেশন না-করিয়ে কোনও জমি বা বাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না। মিউটেশন সার্টিফিকেট না-থাকলে করা যাবে না রেজিস্ট্রেশনও। এমন বিধি চালু হওয়ার পরেও জমি বেচাকেনায় সক্রিয় হয়ে উঠছে প্রতারণা চক্র। মূলত, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে এই প্রতারণা চক্রের বাড়বাড়ন্ত। যার প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে সিআইডি তদন্ত।
রাজ্যের উপকূল এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে জমি কেনার পর লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনকী সিআইডি তদন্তও শুরু হয়েছে। গত ২০ জুন মন্দারমণি উপকূল থানায় জয়ন্ত সাহা নামে এক প্রোমোটার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার দমদম এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ, ২০১৮ সালে রামনগর-১ ব্লকের তাজপুর মৌজায় জমি কেনার জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন এই প্রোমোটার। এরপর তাঁকে একটি জমিও রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন স্থানীয় দুই ব্যক্তি। যদিও বছর দুয়েক বাদে ওই জায়গার দখল নিতে যেতেই বাধে বিপত্তি। ওই প্রোমোটার এবং তাঁর ছেলেকে বাসিন্দারা সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। জয়ন্তর দাবি, ‘‘কাঁথির দুজন জমি দালালের মধ্যস্থতায় ৬০ লক্ষ টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু আমাকে যে জমি দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছিল সেই জমির দাবিদার অন্য কেউ বলে পরে জানতে পারি। এরপর মধ্যস্থতাকারী এবং যারা জমির মালিক পরিচয় দিয়ে বিক্রি করেছিল তারা দুজনে টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে।’’ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন পর বিকল্প একটি জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেয় মধ্যস্থতাকারী দুই ব্যক্তি। তবে সেই জমিতে কিছুই গড়ে তোলা সম্ভব নয় জানতে পেরে আমি রাজি হইনি। এরপর তারা আমায় ওই জমি বিক্রি করে দিতে বলে। এবং তার জন্য মাত্র ৫ লক্ষ টাকা দেবে বলে জানায়।’’ এর পরে ওই প্রোমোটার সত্য দাস, সুবিমল মাইতি, প্রতাপ মাইতি এবং সুশীল মাইতি নামে চারজনের বিরুদ্ধে মন্দারমণি উপকূল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সত্য এবং সুবিমল কাঁথির বাসিন্দা। এরা জমির দালাল হিসেবে এবং বাকি দুজন জমির মালিক হিসেবে তাঁর সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করেছেন বলে জয়ন্তর দাবি। প্রাথমিকভাবে ঘটনার তদন্ত করে পুলিশ। পরে বিষয়টির তদন্ত হাতে নেয় সিআইডি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু জয়ন্ত নন, এরকম আরও অনেকে পর্যটন কেন্দ্রে জমি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। শুধু জুন মাসেই এ ব্যাপারে দু’টি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
দিঘা, মন্দারমণি এবং তাজপুর এই তিন পর্যটন কেন্দ্রে জমি কিংবা হোটেল কেনাবেচা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। তারই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারণা চক্র। মূলত কলকাতা এবং রাজ্যের অন্য জেলার উদ্যোগপতিরা এখানে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। আর তারাই জমি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন বলে খবর। এ প্রসঙ্গে মন্দারমণি হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক দেবদুলাল দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘শুধু মন্দারমণি কিংবা তাজপুর নয়। দিঘাতেও এই প্রতারণা চক্র সক্রিয়। তবে বাইরে থেকে যারাই এখানে জমি কিনতে আসুক তাদের উচিত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজখবর নেওয়া।’’
জমি কেনাবেচায় প্রতারণা চক্রের পিছনে শাসক দলের নেতাদের একাংশ জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘জমি কিংবা বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের আগে ভূমি দফতর থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে কেনা উচিত। এ ব্যাপারে শিল্পপতিদের আমরা সজাগ ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy