একা হাতিতে রক্ষা নেই, বাঘ আবার তার দোসর!
ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক কেটেছে ভালয় ভালয়। এ বার বন দফতরের সামনে আরও একটি ‘বড় পরীক্ষা’। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে হাতি এবং বাঘ— এই দুই বন্যপ্রাণীকে নিয়েই বাড়তি সতর্ক বন দফতর।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিভিন্ন ব্লকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ১০০টি হাতি। সবচেয়ে বেশি হাতি রয়েছে বন দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনে। মেদিনীপুর সদর, শালবনি, চন্দ্রকোনা রোড ব্লক এলাকায় হাতির দল ঘোরাঘুরি করছে কয়েকদিন ধরেই। রূপনারায়ণ ডিভিশনের গোয়ালতোড় এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে ১৬-১৭টি হাতি। হাতির দল যে সব এলাকায় রয়েছে, সেইসব এলাকায় কয়েকদিন ধরেই মাইকে প্রচার চালিয়েছে বন দফতর। বনপথে শুরু হয়েছে
বাড়তি নজরদারি।
মেদিনীপুর ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ গোয়ালতোড়ের যে সব জঙ্গল এলাকায় হাতি রয়েছে, সেই বনপথে অতিরিক্ত আটটি গাড়ি রাখছে বন দফতর। হুলাপার্টি, বন দফতরের কর্মচারী, বনকর্মী মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন থাকবেন জঙ্গল পথে। হাতি পথ এড়িয়ে যাতে পরীক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেন, সে জন্য ওই পথগুলিতে ড্রপগেট করা হবে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। রূপনারায়ণ ডিএফও শিবানন্দ রাম বলেন, ‘‘হাতি থাকা এলাকায় পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁঁছানোর জন্য আমাদের
গাড়ি থাকছে।’’
ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়া সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি এলাকায় মাঝে মধ্যেই বাঘের পায়ের ছাপ মিলছে। যদিও বন দফতরের দাবি, এই মুহূর্তে এলাকায় বাঘ থাকার নতুন করে প্রমাণ মেলেনি। তবে দুই জেলায় বেশ কিছু হাতি রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর মুখেই ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জে হাজির হয়েছে ১৮-২০টি হাতি। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে বেলপাহাড়ি রেঞ্জে ঢুকেছে পাঁচটি হাতি। এ ছাড়া ঝাড়গ্রাম রেঞ্জে আরও পাঁচটি হাতি রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের এলাকায় ২০টি ড্রপ গেট করা হচ্ছে। ৫০ জনের র্যাপিড অ্যাকশন টিম থাকছে। বেলপাহাড়ি, ভুলাভেদা, ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, লোধাশুলি এই পাঁচটি রেঞ্জে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছ’টি গাড়ি থাকবে। এ ছাড়া ১২টি টহলদার গাড়ি থাকবে। ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) উমর ইমাম বলেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি রাখছি।’’
আবার খড়্গপুর বন বিভাগের অধীনে থাকা ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম রেঞ্জে ১০টি ও চাঁদাবিলা রেঞ্জে তিনটি হাতি রয়েছে। এ ছাড়া বাকড়া বিট এলাকায় (সাঁকরাইল ব্লক) রয়েছে চারটি হাতি। খড়্গপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকাগুলির জন্য ১৫টি ড্রপগেট করা হচ্ছে। থাকছে গাড়ি। প্রতি রেঞ্জে আট থেকে ১০ জনের র্যাপিড অ্যাকশন টিম থাকবে। খড়্গপুর বন বিভাগে ১৫০ বনকর্মী নজরদারির কাজে মোতায়েন থাকবেন। লালগড় রেঞ্জে রয়েছে সাতটি হাতি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলার ২৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে যে সব পরীক্ষার্থী আসবে তাদের যাতায়াতের পথে নজরদারি করবে বন দফতর। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলছেন, ‘‘পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারেন তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)