পাঁশকুড়া ফুলবাজারে ফুলের বিকিকিনি। —নিজস্ব চিত্র।
ফুল চাষের নিরিখে রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। জেলার পাঁশকুড়া ব্লকে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। এ ছাড়াও কোলাঘাট,শহিদ মাতঙ্গিনী এবং তমলুক ব্লকের একাংশেও ফুল চাষ হয়। ফুলের পাশাপাশি জেলার একাধিক ব্লকে পান চাষ হয়। রেলযোগে ফুল ও পান কম খরচে সহজেই বাজারে নিয়ে যাতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ ফুল ও পান ট্রেনে করেই ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয়। কিন্তু কয়েক মাস হল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখায় নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ ট্রেন চলাচল করছে না বলে অভিযোগ। সব চেয়ে দেরিতে চলছে লোকাল ট্রেনগুলি। তার প্রভাব এসে পড়েছে ফুল ও পান চাষের ওপর।
কোলাঘাটের পরমানন্দপুর গ্রামের ফুলচাষি গৌরীশঙ্কর ঘাঁটা বলেন,‘‘গাঁদা এবং বেল ফুলের চাষ করি। সকাল সকাল কলকাতার বাজারে ফুল নিয়ে গেলে ভাল দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এখন লোকাল ট্রেন এত দেরি করে চলছে তার জন্য সময়ে বাজারে পৌঁছতে পারছি না। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন,‘‘ট্রেনের ভোগান্তিতে জেরাবার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা। এর প্রতিবাদে কয়েক মাস আগে ভোগপুর স্টেশনে রেলযাত্রীরা অবরোধ করেছিলেন। সেই ঘটনার পর রেল কয়েকজন অবরোধকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা চাই অবিলম্বে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হোক।’’
লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার ট্রেনগুলিও দেরিতে চলছে বলে অভিযোগ। ট্রেনে পান পাঠানোর সমস্যা দেখা দেওয়ায় লরিতে করে পান রফতানি করতে হচ্ছে। পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে বেশি দাম দিয়ে পান কিনছেন না বলে অভিযোগ। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন পানচাষিরা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পান চাষি সমন্বয় সমিতির সম্পাদক সোমনাথ ভৌমিক বলেন, ‘‘চার মাস ধরে অনিয়মিত ট্রেন চলছে। ট্রেনের অস্বাভাবিক দেরির কারণে রেলযোগে আর পান পাঠানো হচ্ছে না।’’
পুজোর দেড় দু’মাস আগে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড়ের অনেকেই, বিশেষ করে জামাকাপড়ের ব্যবসায়ীরা কলকাতায় গিয়ে পাইকারি জিনিসপত্র কিনে আনেন। তাঁদের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা ট্রেন। সেই ট্রেনই এ বার চিন্তায় ফেলছে ব্যবসায়ীদের। বাধ্য হয়ে এইসব এলাকার ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের ভরসা এখন বাস। আদ্রা ডিভিশনের কমার্শিয়াল বিভাগের এক আধিকারিক বলেন,‘‘ট্রেন যাত্রীদের উন্নত পরিষেবা দেওয়ার জন্য রেল বদ্ধপরিকর। সে জন্য মাঝেমধ্যে লাইন ব্লক করতে হয়। এতে সাময়িক অসুবিধা হলেও বৃহৎ স্বার্থে যাত্রীরা আশা করি সহযোগিতা করবেন।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন,‘‘রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাঝেমধ্যে সাময়িক ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’’ বিষয়টি নিয়ে সরব রেলযাত্রী সংগঠনগুলিও। পাঁশকুড়া-হলদিয়া-দিঘা দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সরোজ ঘড়া বলেন,‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সহ সমস্ত আধিকারিককে এ ব্যাপারে আমরা চিঠি দিয়েছি। ওঁরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্যার সমাধান করার ব্যাপারে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।’’
(তথ্য সহায়তা: দিগন্ত মান্না, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy