Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Midnapore Flower Market

অযোধ্যায় জেলার ফুলও, চাঙ্গা বাজার

উদ্বোধনের অপেক্ষায় অযোধ্যার রামমন্দির। আর তা ঘিরে কার্যত সাজ সাজ রব সারা দেশ জুড়ে। সেই আঁচ এসে পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ফুলবাগানেও। রামমন্দির সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফুলের একটা বড় অংশ যাচ্ছে পাঁশকুড়া থেকে। ফলে গরম স্থানীয় ফুলের বাজার, খুশি ফুল ব্যবসায়ীরাও। লিখছেন দিগন্ত মান্না 

পাঁশকুড়ার বাজারে গাঁদা ফুল।

পাঁশকুড়ার বাজারে গাঁদা ফুল। —নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত মান্না
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩১
Share: Save:

আগামী ২২ জানুয়ারি অয্যোধ্যায় রামমন্দিরের শুভ উদ্বোধন। গোটা রামমন্দির চত্বর বাহারি ফুল দিয়ে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, মন্দির সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হবে মূলত চন্দ্রমল্লিকা এবং গাঁদা ফুল। আর এই দু’টি ফুলের জোগান যাচ্ছে এই রাজ্য থেকে। যার একটি বড় অংশের জোগান যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গিয়েছে ফুল পাঠানোর কাজ। এ রকম আবহে সমস্ত ধরনের ফুলের চাহিদা এক ধাক্কায় বেড়েছে অনেকটাই। ফলে দামও মিলছে ভাল। ফলে খুশি ফুলচাষিরা। অনেক ফুল ব্যবসায়ী আবার পাঁশকুড়ার গাঁদা কিনে মজুত করছেন হিমঘরে।

জানা যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ২৫ থেকে ৩০ রকমের ফুলের চাষ হয়। গুণগত মানের কারণে পাঁশকুড়ার চন্দ্রমল্লিকা এবং গাঁদার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে দেশ জুড়ে সাজ সাজ রব। আগামী ২২ তারিখ রামমন্দিরের গর্ভগৃহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তার সাতদিন আগে থেকেই রামমন্দিরে পুজোপাঠ শুরু হয়ে গিয়েছে। খবর, অযোধ্যার রামমন্দিরের জন্য জেলায় দু’ভাবে বরাত এসেছে। এক, কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। দুই, দিল্লির ব্যবসায়ীরা তাঁদের এজেন্টের মাধ্যমে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সরাসরি ফুল কিনছেন। তিন ফুট লম্বা গাঁদার মালা ২০টি করে একসঙ্গে বিক্রি হয়। গত তিনদিনে পূর্ব মেদিনীপুরের দেউলিয়া ফুলবাজার থেকে ১২ হাজার কুঁড়ির গাঁদার মালা দু’টি ১২ চাকার লরিতে করে সরাসরি অযোধ্যায় পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবারও দেউলিয়া ফুলবাজার থেকে আরও চার হাজার কুঁড়ি গাঁদা অযোধ্যায় পাঠানো হয়েছে।

গাঁদার পাশাপাশি রামমন্দিরে পাঠানো হয়েছে পাঁশকুড়ার চন্দ্রমল্লিকাও। পাঁশকুড়ার মহৎপুর এবং জানাবাড় থেকে দু’টি ১২ চাকার লরি বোঝাই করে মোট চার লক্ষ পিস চন্দ্রমল্লিকা ফুল পাঠানো হয়েছে অযোধ্যার রামমন্দিরে। এ ছাড়াও ১০ হাজার বান্ডিল গ্ল্যাডিওলাস ফুল পাঠানো হয়েছে।

দেউলিয়া ফুলবাজারের ফুল ব্যবসায়ী প্রতীক পাখিরা বলেন, ‘‘টানা তিনদিন পূর্ব মেদিনীপুরের ফুল কিনে লরিতে করে অযোধ্যায় পাঠিয়েছি। মঙ্গলবারও চার হাজার কুঁড়ি গাঁদার মালা অযোধ্যায় পাঠানো হয়েছে। রামমন্দিরের জন্য বাজারে ফুলের চাহিদা অনেক বেড়েছে।’’ পাঁশকুড়ার দোকান্ডার গাঁদা চাষি সুব্রত বেরা বলেন, ‘‘পৌষ মাস জুড়ে গাঁদা ভালই বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় ভাবেও ফুলের চাহিদা ভাল। এ রকম বাজার সব বছর হয় না।’’

সাধারণত প্রতি বছর পৌষ মাসে ফুলের দাম খুবই কম থাকে। মাঘ মাসে বিয়ের লগ্নের সময় ফুলের দাম বাড়ে। এ বার কিন্তু চিত্রটা আলাদা। এ বার গোটা পৌষ মাস জুড়েই ফুলের দাম ছিল বেশ ভাল। মাঘ মাস পড়ার পর থেকে ফুলের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। রামমন্দির উদ্বোধনের আগে দেশ জুড়ে প্রতিটি মন্দিরে সাফাই অভিযান, বিশেষ পুজোপাঠ ইত্যাদি শুরু হয়েছে। ফলে ফুলের চাহিদায় ভাটা পড়েনি।

অক্টোবর মাসের পর থেকে কোনও বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বর্ষার ফুলের গাছ থেকে এখনও ফুল উৎপাদন হচ্ছে। শীতকালের ফুলগাছে সার, কীটনাশক ইত্যাদি বেশি পরিমাণে দিতে হয়। ফলে বাজারে চাহিদা বাড়লেও চাষিরা ফুলের জোগান দিতে পারছেন। চাহিদা থাকায় ফুলের দামও ভাল মিলছে।

গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি রজনীগন্ধা এবং গোলাপের দামও এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। এই প্রসঙ্গে সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘রাম মন্দির উদ্বোধনের কারণে ফুলের বাজার অনেক আগে থেকেই চাঙ্গা। সমস্ত ধরনের ফুলের দাম ও
চাহিদা বেড়েছে।’’

অন্য দিকে, রামমন্দির উদ্বোধনের আবহে পূর্ব মেদিনীপুরের ফুলচাষিরা বাড়তি লাভের মুখ দেখার বিষয়টি নিয়ে আসরে শামিল গেরুয়া শিবিরও। বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘এটাই আদতে রাম-রাজ্য। যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কয়েক কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হয়েছে। ২২ তারিখ পর্যন্ত আরও কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হবে। ফুলচাষিরা খুব খুশি।’’ যদিও বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করছে তৃণমূল। তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ার ফুল মন্দির, মসজিদ, গির্জা— সব জায়গাতেই যায়। বিজেপি আগে বলুক বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির
কী হল!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE