Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Flower Market

‘পুজোয় পাঠাব কী? ভেসে গিয়েছে সব’! বন্যাবিধ্বস্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে মাথায় হাত ফুলচাষিদের

গত কয়েক দিনে বৃষ্টির সঙ্গে ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা-সহ বিভিন্ন এলাকায়।

Flower

দোপাটি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বন্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ডেবরা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৭
Share: Save:

সামনেই দুর্গাপুজো। কিন্তু শহরের পুজো প্যান্ডেলগুলিতে পাঠানো হবে কী? ক্ষেত তো বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে! ফুলগাছ সবই প্রায় নষ্ট। কিছু পচে গিয়েছে। মাথায় হাত পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশের ফুলচাষিদের। গত কয়েক দিনে বৃষ্টির সঙ্গে ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, ঘাটাল, দাসপুর-১ এবং ২ ব্লক, চন্দ্রকোনা-সহ বিভিন্ন এলাকায়। এখন জল কিছুটা নেমেছে। তবে সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ফুলগাছও। প্রভূত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।

গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, দোপাটি এবং জবাফুলের চাষের জন্য প্রসিদ্ধ ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুর, ডুয়া, জলিবান্দা, প্রদীমা, শ্যামচক, মির্জানগর, নছিপুর, চকসুজাল, খড়্গপুর গ্রামীণের মাদপুর, শ্যামচক, দাসপুরের জ্যোৎঘনশ্যাম, শিবরা, রাজনগর এবং খুরোদা এলাকা। কিন্তু এ বার বন্যায় সমস্ত ফুল গাছের চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে কলকাতা-সহ পার্শ্বস্থ জেলাগুলিতে পুজোর সময়ে ফুলের জোগান কম হবে বলে আশঙ্কা। সম্ভাবনা ফুলের দাম বৃদ্ধিরও। ফুলচাষিরা জানাচ্ছেন, যেখানে প্রতি দিন এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৪০-৪২ কেজি রজনীগন্ধা উৎপাদন হত, সেখানে এখন ১ থেকে ২ কেজি ফুল পাওয়া যাচ্ছে। আর গাঁদা গাছের গোড়ায় জল জমে যাওয়ায় পচন ধরতে শুরু করেছে। চাষিরা সেই গাছ বাঁচাতে উন্নত মানের রাসায়নিক প্রয়োগ করা শুরু করেছেন। কিন্তু জমিতে জমে থাকা জল চিন্তা বাড়াচ্ছে। রজনীগন্ধা চাষি দীপক বরাম বলেন, ‘‘এখানে বন্যার জল তেমন না এলেও টানা বৃষ্টির জলে গাছের চারা নষ্ট হতে বসেছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর চড়া রোদের কারণেও সমস্যা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, তাঁর আড়াই বিঘা জমির মধ্যে অর্ধেক ফুলগাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিতে ফুল ধরছে না। গাঁদারও একই অবস্থা। ওই এলাকায় প্রায় ২০০ চাষি রয়েছেন, যাঁরা ফুলচাষ করেন। এখন ফুল বাঁচাতে উন্নতমানের রাসায়নিক দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে তাতেও খরচ অনেক।

কোলাঘাট, ডেবরা, নতুনবাজার, আশাড়ি, দেউলিয়া, বালিচক বাজারে মূলত ফুল রফতানি হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যায় ওই ফুল। কিন্তু ওই বাজারগুলিতে এখন ফুলের আকাল। জলিবান্দার ফুলচাষি অভিজিৎ মাঝি বলেন, ‘‘আমারই প্রায় ৭ কুইন্টাল রজনীগন্ধা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ১০-১২ হাজার গাঁদাফুলের চারা লাগিয়েছিলাম। সব জলের তোড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার পর গাছের গোড়ায় জল থাকায় পচন ধরেছে। ওই সব গাছ থেকে ফুল পাওয়া খুবই সমস্যার।’’

এ নিয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না জানতে জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মৌ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘জল না কমা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, কতটা পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। একটা ‘অ্যাসেসমেন্ট’ করা চলছে। রিপোর্ট পেলেই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’’

সারা বাংলা ফুলচাষি এবং ফুল ব্যবসায়ী সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি নারায়ণচন্দ্র নায়েক জানান, এ বার দুই মেদিনীপুরেই ফুলচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ৫০ শতাংশ ফুলগাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজোর সময় ফুলের জোগানে সমস্যা হবে। ভিন্‌রাজ্য থেকে ফুল আমদানি করতে হবে। ফলে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা তো থাকছেই। কিন্তু সমস্যা হল, দাম বেশি হলে পুজো উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই ফুলের বাজেট কাটছাঁট করবেন। তাই ক্ষতিটা ফুলচাষি থেকে ব্যবসায়ী, সবারই। পদ্মচাষের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। জল বেশি হওয়ায় প্রচুর গাছ নষ্ট হওয়ার মুখে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Paschim Midnapore flower flood Durga Puja 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy