E-Paper

জল-হস্তীতেই ফিকে আগমনীর আনন্দ

ফসল ওঠার পর ধান নিয়ে চাষিরা ঘরে ফিরলে শুরু হয় ‘নবান্ন উৎসব’। কিন্তু সেই ধান আগেই নষ্ট করে দিচ্ছে হাতির দল। যার ফলে জেলার এই প্রত্যন্ত এলাকায় গজরাজের জন্য উৎসবের মেজাজ এখন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

কলাইকুন্ডা রেঞ্জে হাতির দল।

কলাইকুন্ডা রেঞ্জে হাতির দল। —নিজস্ব চিত্র।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৩
Share
Save

বৃষ্টি আর হাতি। জোড়া বিপদে পুজোর আগে উৎসবের মেজাজ ফিকে চাষিদের।

বৃষ্টির জেরে ডুলুং ও সুবর্ণরেখা নদীর জল ফুঁসছে। নদীর পাড়ে গিয়ে দু’বার ফেরত চলে এসেছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি হাতির দল। ওই দলে রয়েছে বেশ কয়েকটি শাবক। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে এলাকায় হাতির দল থাকায় ঝাড়গ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।

বন দফতর সূত্রের খবর, গত দু’সপ্তাহ ধরে খড়্গপুর ডিভিশনের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের ‘বম্বিং এরিয়া’য় রয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি হাতির দল। ঝাড়গ্রাম ব্লকের দুধকুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সাঁকরাইল পাথরা ও ছত্রি গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে কয়েক হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে ‘বম্বিং এরিয়া’ (বায়ুসেনার মহড়ার জন্য নির্ধারিত স্থান)। সেখানে জঙ্গলের পরিমাণ কমেছে বলে অভিযোগ। চাষিদের অভিযোগ, ওই এলাকায় জঙ্গল লুঠ হচ্ছে। জঙ্গল থেকেই আগে হাতি খাবার সংগ্রহ করত। জঙ্গল কমে যাওয়ায় খাবার মিলছে না। ফলে হাতি চাষের জমিতে ঢুকে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বায়ু সেনার মহড়া বন্ধ থাকে। মহড়া হলে হেলিকপ্টারের শব্দে হাতি সরে যায়। এখন বৃষ্টির জন্য মহড়া বন্ধ। ফলে হাতির দল ঘোরাফেরা করছে ওই এলাকায়। ওই হাতির দলে সদ্যোজাত-সহ কয়েকটি শাবক রয়েছে। বৃষ্টিতে সাঁকরাইলের রোহিনীর ডুলুং ও সুবর্ণরেখা নদীর জল ফুঁসছে। ফলে নদী পেরিয়ে হাতির দলের নয়াগ্রাম হয়ে ওড়িশার দিকে যাওয়ারও উপায় নেই। যার ফলে ঝাড়গ্রামের ঝাড়গ্রাম ব্লকের দুধকুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্করবনি, সগড়ভাঙা, হরিয়াধারা ও সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা ও ছত্রি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে সন্ধ্যা হলেই চাষের জমিতে নামছে হাতির দল। জমিতে থাকা ধানেই নৈশভোজ সারছে ঐরাবতের দল।

বৃষ্টির জন্য হাতি তাড়ানোর কাজও ব্যাহত হচ্ছে। বন দফতর সূত্রের খবর, প্রতিদিন হাতির দলটি দু’টি দলে ভাগ হয়ে জমিতে নেমে যাচ্ছে। আঙ্গারনালী গ্রামের বাসিন্দা রাধানাথ মাহাতো বলছেন, ‘‘এ বার ৮ কাঠা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। সেই জমিতে ৩০-৩৫টি হাতি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কচি ধান খাচ্ছে। যার ফলে ধানের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। ক্ষতিপূরণও সে ভাবে মেলে না। তাই রেশনে মাথা পিছু বাড়তি চাল দিতে হবে।’’ শঙ্করবনি গ্রামের নেপাল মাহাতো, বিজয় মাহাতো ও হরিয়াধরা গ্রামের ভোলানাথ মাহাতোরা বলছেন, ‘‘কষ্ট করে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করছি। আর সেই ধান সব শেষ করে দিচ্ছে হাতির দল।’’

ফসল ওঠার পর ধান নিয়ে চাষিরা ঘরে ফিরলে শুরু হয় ‘নবান্ন উৎসব’। কিন্তু সেই ধান আগেই নষ্ট করে দিচ্ছে হাতির দল। যার ফলে জেলার এই প্রত্যন্ত এলাকায় গজরাজের জন্য উৎসবের মেজাজ এখন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সমস্যার কথা মানছে বন দফতর। খড়্গপুরের ডিএফও মনীশ যাদব বলেন, ‘‘হাতির দলটিকে দু’বার সরানো হয়েছিল। কিন্তু ফের ফিরে চলে আসছে হাতির দলটি। দলে বেশ কিছু শাবক রয়েছে। এলাকার দীর্ঘদিন থাকার ফলে ক্ষতিপূরণের অঙ্কও বাড়ছে।’’ ডিএফও জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জন্য হাতি তাড়াতেও সমস্যা হচ্ছে। হাতির দলটিকে অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চলছে।

মেঘ সরলে হয়তো আকাশে ফের মিলবে শরতের ছোঁয়া। উমার আগমনে শুরু হবে উৎসব।সোনার ফসল ঘরে উঠলে নবান্ন। কিন্তু আপাতত বরুণদেব আর গজরাজ যেন উৎসবের মাঝে কালাপাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Elephants Elephant Attacks Jhargram Paddy fields

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।