বৃহস্পতিবার দুপুর। কালেক্টরেট চত্বরে এল লরিটি। লরিতে আসবাবপত্র সহ নানা সামগ্রী ভর্তি। যেমন কাঠের বক্সখাট, স্টিলের আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, ফ্রিজ প্রভৃতি। হলটা কী? এ সব কেন এখানে? উৎসুক কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে ফিসফাস! পরে জানা গেল, এ সব বিয়ের যৌতুক। ফেরত দিতেই এখানে আনা। এবং সেটা প্রশাসনিক নির্দেশ অনুযায়ী। দু'পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়েছে। সেই মতো এই ফেরত।
খড়্গপুর গ্রামীণের বাসিন্দা অঙ্কিতা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ডেবরার বাসিন্দা দেবাশিস মাইতির। বছর দুয়েক আগে। তবে বিয়ের পরপরই সংসার ভেঙেছে। অঙ্কিতার দাবি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে কটূক্তি করত। সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়ি চলে আসেন তিনি। পরে সুবিচার চেয়ে প্রোটেকশন অফিসার সন্দীপ মাইতির দফতরে আসেন অঙ্কিতা। কালেক্টরেট চত্বরে এই দফতর রয়েছে। এখানে ওয়ান স্টপ সেন্টারও রয়েছে। মূলত এই সেন্টারের মাধ্যমে পীড়িত এবং পারিবারিক হিংসার শিকার হওয়া মহিলাদের আইনি সহায়তা, পুলিশি সহায়তা, মানসিক- সামাজিক পরামর্শ প্রদান প্রভৃতি পরিষেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। অঙ্কিতার নালিশের ভিত্তিতে এখানে তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে ডেকে কথা বলা হয়। দু'পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন ওই সেন্টারের কেস- ওয়ার্কার পারমিতা বক্সী ভট্টাচার্য। দেখা যায়, স্বামী- স্ত্রী সংসার করতে নারাজ। মিউচুয়াল ডিভোর্সের পথে যেতে ইচ্ছুক তাঁরা। ঠিক হয়, বিয়েতে দুই পরিবারে যৌতুক হিসেবে যা যা গিয়েছে, একে অপরকে তা ফেরত দেবে। সেই মতো এদিনের ওই ফেরত পর্ব। যৌতুক হিসেবে কনের পরিবারের থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা, ১২০ গ্রাম সোনার গয়না প্রভৃতি নেওয়া হয়েছিল। সে সবই এদিন ফেরত পেয়েছেন অঙ্কিতা। রীতিমতো তালিকা মিলিয়ে চলে ফেরত পর্ব। কী ছিল না সেই তালিকায়! চামচ থেকে শুরু করে গয়না। দেবাশিসের বাড়ির তরফ থেকে শাড়ি-সহ যে সব জিনিস দেওয়া হয়েছিল সবই ফেরত পেয়েছেন তাঁরাও।
দু'পক্ষকে ফের পরের মাসে, একটি নির্দিষ্ট দিনে এখানে ডাকা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কথা বলার জন্য।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)