বাপ রে কী দাপট!
দাপট বলে দাপট। পেশায় নিরাপত্তারক্ষী। তিনি হুমকি দিচ্ছেন কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার।‘ হিন্দুস্তান এজিস লিমিটেড’ নামে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, কারখানা পরিচালনায় বাধা রেয়াত করা হবে। প্রসঙ্গত, এই শিল্পসংস্থার প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন সম্প্রতি কলকাতায় শেষ হওয়া বাণিজ্য সম্মেলনে। আর স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মী হলদিয়া বন্দরের তৃণমূলের ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের কমিটি সদস্য।
কর্মসংস্থান যে তাঁর এখন পাখির যোগ তা এ বার বাণিজ্য সম্মেলনে আরও একবার স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা পরিচালনায় যে কোনও বাধা রেয়াত করা হবে না তা-ও এর আগে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই বাণিজ্য সম্মেলনে ডাক পাওয়া একটি শিল্পসংস্থাকেও শুনতে হল কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি। হিন্দুস্তান এজিস লিমিটেডের হলদিয়া বন্দর সংলগ্ন বেশ কিছু পেট্রোপণ্যের ট্যাংক আছে। পাতিখালী এলাকাতেও পেট্রোপণ্যের ট্যাংক এবং গ্যাস বটলিং এর কাজ করে এই সংস্থা। সংস্থার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থারই কর্মী নাসিম আখতার। অভিযোগ, বেতন নিয়ে নানা ক্ষোভ রয়েছে তাঁর। স্বাভাবিক ভাবে সেই ক্ষোভ তাঁর নিয়োগকারী সংস্থারও বিরুদ্ধে। কিন্তু ক্ষোভ করতে নাকি তিনি হিন্দুস্তান এজিস লিমিটেড বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ মৌখিক তো বটেই এমনকী, ফোনে মেসেজ করেও নাকি হুমকি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। কারখানার বেশ কয়েকজন আধিকারিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেকেই নাকি কারখানা মুখো হতে চাইছেন না। সম্প্রতি কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হলদিয়াতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধের হুমকি তাই মেনে নিতে পারছেন না কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট রথীন সরকার বলেন, ‘‘ওই নিরাপত্তা রক্ষী একাধিকবার কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার থেকে আবার কারখানার গেট বন্ধ করে দেবেন হুমকি দিয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ হলদিয়াতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। সেই বিনিয়োগে যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয় সেই জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।" অভিযুক্ত নাসিম বলেন, ‘‘আমাদের সুবিধা অসুবিধার কথা কেউ দেখছে না। নেতাদের বললেও আমাদের পাশে থাকে না। আমি রাগের মাথায় গেট বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।’’
প্রশাসন অবশ্য বিষয়টিকে আদৌ হাল্কা ভাব নিতে নারাজ। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন,"কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ পেয়েছি। কারখানা পরিচালনায় কোনও রকম বাধাকে প্রশ্রয় দেবে না জেলা প্রশাসন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" হলদিয়া বন্দরের তৃণমূলের ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের সহ-সভাপতি মিলন মণ্ডলের ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ, কোনও কর্মবিরতি করা যাবে না। কোনও সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে হবে। যে বা যারা দলের নাম ভাঙিয়ে এইরকম কর্মবিরতির কথা বলছেন, তাঁরা বড় অপরাধ করছেন। দল এই কর্ম বিরতিকে সমর্থন করে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)