অবহেলায় পড়ে রয়েছে লরিটি। —নিজস্ব চিত্র।
লক্ষ্য পরিচ্ছন্নতা। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশনের পাশাপাশি এ রাজ্যে সমান্তরাল ভাবে চলছে মিশন নির্মল বাংলা। আর সেই প্রকল্পে পাওয়া জঞ্জাল বহনের আধুনিক একটি গাড়ি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। গাড়ির দাম ৩০ লক্ষ টাকা। ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদরের পুরসভা তমলুক।
জঞ্জাল বহনে সুবিধার জন্যই রাজ্য পুর-দফতর মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে প্রায় এক বছর আগে ৩০ লক্ষ টাকা দামের আধুনিক এই বড় লরিটি দিয়েছিল তমলুক পুরসভাকে। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ সেই লরিটি এখনও ব্যবহার শুরুই করেনি বলে অভিযোগ। লরিটি শহরের স্টিমারঘাট এলাকায় পুরসভার রূপনারায়ণ অতিথি নিবাসের সামনে পড়ে রয়েছে। তার চার দিকে আগাছার জঙ্গল। প্রশ্ন উঠেছে, জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য পুরসভা এমন একটি দামি গাড়ি পাওয়ার পরেও কেন তা অবহেলায় পড়ে থাকবে।
তমলুক পুর-শহরে বাসিন্দাদের বাড়ি, দোকান, বিভিন্ন অফিস ও রাস্তায় জমে থাকা জঞ্জাল সাফাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযান ও রাজ্য সরকারের মিশন নির্মল বাংলা কর্মসূচি চালুর পরে তমলুক শহরে বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু হয়েছে কয়েকবছর আগে। পুরসভার সাফাই কর্মীরা ছোট ছোট গাড়ি নিয়ে সকালবেলায় পাড়ায় পাড়ায় যান। বাড়ি বাড়ি ঘুরে জঞ্জাল সংগ্রহ করেন। পরে ওই সব জঞ্জাল লরিতে চাপিয়ে শহরের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকায় পুরসভার ‘ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ড’ (পুকুর খুঁড়ে তৈরি করা আবর্জনা ফেলার জায়গা)-এ ফেলে আসা হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত জঞ্জাল বহনের জন্য কয়েকটি ট্রাক্টর যুক্ত ট্রেলার রয়েছে। এছাড়া একটি ছোট লরিও রয়েছে।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাফাই কর্মীরা জঞ্জাল তুলে কয়েকটি জায়গায় জমা করেন। এরপর একটি ‘হাইড্রোলিক কমপ্যাক্টর’ যন্ত্র দিয়ে ওই জঞ্জাল পেষাই করে লরিতে চাপিয়ে দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় পুরসভার ‘ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে’ নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। পুরসভার সাফাই কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শহরে জনবসতি ও দোকানপাট বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জঞ্জালের পরিমাণও। ফলে, প্রতিদিন সকালে জঞ্জাল তুলে ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে নিয়ে ফেলার জন্য আরও গাড়ি প্রয়োজন। অথচ একটি বড় গাড়ি পড়ে থাকা সত্বেও তা ব্যবহার করা হচ্ছেনা। ফলে শহরের জঞ্জাল সাফাই করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ধারে জঞ্জাল জমে থাকায় সকালের ব্যস্ত সময়ে পথে চলতে সমস্যাও হচ্ছে।
তমলুক পৌর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক রঞ্জিত দত্তের অভিযোগ, ‘‘জঞ্জাল সাফাইয়ের গাড়ি চালানোর জন্য কয়েকজন চালক রয়েছেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। জঞ্জাল সাফাই বিভাগে আরও গাড়ি এবং চালক প্রয়োজন। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করছেন না। বহু লক্ষ টাকার গাড়ি পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’’
সমস্যা অস্বীকার করছেন না তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনও। তবে তাঁর দাবি, ‘‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে একটি নতুন বড় লরি দেওয়া হলেও সেটি চালাতে চালক নিয়োগ করা হয়নি। এ জন্য রাজ্য পুর দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চালক নিয়োগের অনুমতি পেলে ওই গাড়িটি ব্যবহার করা হবে।’’
কতদিনে সেই অনুমতি মেলে আর চালক নিয়োগ হয়, সে দিকেই তাকিয়ে তমলুকবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy