Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Goaltor

হুলায় আগুনে দগ্ধের মৃত্যু, চিন্তা 

৮ জানুয়ারি রাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে হুলার আগুনে পুড়ে জখম হয় একাদশ শ্রেণির তুহিন মাহাতো (১৭)। মঙ্গলবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু হয় তার।

গোয়ালডাঙায় চাষ জমিতে হাতি। নিজস্ব চিত্র।

গোয়ালডাঙায় চাষ জমিতে হাতি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২৯
Share: Save:

হাতির আতঙ্কে ব্যতিব্যস্ত বন দফতর। গোয়ালতোড় ব্লক এলাকায় প্রায় ৪৫-৫০টি হাতির একটি বড় দল কয়েকদিন ধরেই ঘোরাফেরা করছে। তছনছ করছে খেতের ফসল। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করায় আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায়। হাতিদের বাগে আনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বন দফতরের কর্মীদের।

৮ জানুয়ারি রাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে হুলার আগুনে পুড়ে জখম হয় একাদশ শ্রেণির তুহিন মাহাতো (১৭)। মঙ্গলবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু হয় তার। ওই ছাত্রের বাড়ি গোয়ালতোড়ের শাঁখাভাঙা এলাকার লাঙলমুড়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে তুহিনও হাতি তাড়াতে গিয়েছিল। আগুনের হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর সময়ে একটি হাতি সামনাসামনি চলে আসে। তখন একটি আগুনের হুলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তুহিনের শরীরে লেগে গিয়েছিল। এ দিকে বুধবার রাত ৯ টা নাগাদ হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যাক্তির। গোয়ালতোড় ব্লকের হুমগড় রেঞ্জের মোটগোদার কাছে ৩০-৩৫ বছরের ওই ব্যাক্তি হাতির সামনে পড়ে যায়। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে উমরাপোতা এলাকায় হাতি তাড়াতে গিয়ে পড়ে জখম হন আরও এক ব্যক্তি। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন দফতর হাতিগুলিকে নির্দিষ্ট পথ ধরিয়ে বাঁকুড়ার দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গিয়েছে।

গত সপ্তাহেই হাতির এই বড় দলটি লালগড়ের জঙ্গল ছেড়ে গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে ঘাঁটি গাড়ে। কদমডিহা, ধরমপুরের জঙ্গলে কয়েকদিন থাকার পর ডেরা বদলে হাতিগুলি চলে আসে আশেপাশের জঙ্গলে। বন দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে একসঙ্গে থাকলেও, রাতে হাতিগুলি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আশেপাশের জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন, মঙ্গলবার রাতে টাঙাশোলের জঙ্গলে ১৪-১৫টি, মাহালিসাই রেঞ্জের জঙ্গলে ১৫-২০টি, গোয়ালতোড় রেঞ্জের জঙ্গলে ১০-১২টি হাতি ছিল। জঙ্গলে ছড়িয়ে যাওয়ায় তাদের বাগে আনতে বন দফতরের কর্মীদেরও হিমসিম খেতে হচ্ছে।

কেন হাতির দল রাতে একসাথে না থেকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে? বন দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘হাতি খুব চালাক, তারাও বুঝতে পারছে মানুষের দল আগুন-পটকা নিয়ে তাদের তাড়া করছে। পটকাতে এখন ওরা আর ভয় পাচ্ছে না, আগুনকে ভয় পেলেও, মানুষকে ফাঁকি দিতে তারা এখন রাতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আশেপাশের জঙ্গলেই ঘোরাফেরা করছে।’’ এ দিকে হাতি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। এখন আলু চাষ হচ্ছে গোয়ালতোড়ের প্রায় সর্বত্র। হাতির দাপাদাপিতে তছনছ হচ্ছে আলু খেত। ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে বন দফতরের উপর।

দু’দিন আগেই গোয়ালতোড়ের ধরমপুরে হাতি তাড়ানো বন দফতরের গাড়িকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। এক দিকে মানুষের ক্ষোভ, অন্য দিকে হাতির ঘোরাফেরা, সেই সঙ্গে রয়েছে হুলাপার্টির সদস্যদের দাবিদাওয়াও। বন দফতরে বারবার জানিয়েও নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ায় হুলাপার্টির সদস্যদের অনেকেই হাতি তাড়াতে অনিচ্ছা দেখানোয় বন দফতরের কর্মীরা পড়েছেন মহা সমস্যায়। তারই মধ্যে হাতিদের জঙ্গলের মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখতে চেষ্টার কসুর করছে না বন দফতর। দফতরের রূপনারায়ণ ডিভিশনের এডিএফও তিয়াস ভঞ্জ বলেন, ‘‘গোয়ালতোড়ে হাতির দল প্রায় একসাথেই রয়েছে, হয়তো জঙ্গলের নাম আলাদা হতে পারে, রাস্তার এদিক-ওদিক হতে পারে, তাদের উপর সর্বদা নজরদারি চালানো হচ্ছে, হাতিগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট রুট ধরেই অন্যত্র সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Goaltor elephant attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy